মেঘ বিয়োগের মৌসুম (পর্ব ১২-২০) - রোমান্স প্রেমের গল্প

ঈগল সন্ধি ১ম খন্ড - রাজনৈতিক শিক্ষনীয় গল্প
মেঘ বিয়োগের মৌসুম (পর্ব ১২-২০) - রোমান্স প্রেমের গল্প
মেঘ বিয়োগের মৌসুম (পর্ব ১২-২০) - মজার প্রেম কাহিনী

শুরু হচ্ছে মেঘ বিয়োগের মৌসুম গল্প

পর্ব ১২

লেখিকাঃ তানিয়া মাহি(নীরু)


{getToc} $title={গল্পের সূচিপত্র দেখুন}



ওয়াজিহা মৌ- এর দিকে পা বাড়াবে ঠিক এমন সময় কেউ ওয়াজিহার পিঠে কিছু একটা ঠেকিয়ে বলে ওঠে," এক পা নড়ার চেষ্টা করবেন না। বাড়াবাড়ি করলেই পস্তাতে হবে।"


মেয়েলি গলায় কেউ কথাটা বলে ওঠে। সামনে থেকে মৌ বলে ওঠে," হিয়া, ওকে একদম ভয় দেখাস না। যাকে পাবি তার সাথেই এরকম করবি নাকি? ছাড় ওকে।"


পিছনে থাকা মেয়েটা এবার খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। সামনে এসে বলে," ভয় পেয়েছেন?"

ওয়াজিহা তখনও চুপচাপ চোখ বড়ো বড়ো করে দাঁড়িয়ে আছে। হিয়া তখনও হেসেই যাচ্ছে। 


ওয়াজিহাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মৌ এবার কাছে এসে দাঁড়ায়। একবার হিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার ওয়াজিহার দিকে তাকায়। 


নরমস্বরে বলে," কী হয়েছে, ওয়াজিহা? চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছ কেন?"


ওয়াজিহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে," আমি ভয় পেয়েছি জন্য চুপ করে আছি এমনটা না। মৌ আপু বলতে দুই সেকেন্ড দেরি করলে তুমি এতক্ষণ কী অবস্থায় থাকতে আমার জানা নেই।  আমি তোমাকে যেকোনোভাবে আহ*ত করার অ্যাটেম্প নিয়েছিলাম। আল্লাহ বাঁচিয়ে দিল।"


ওয়াজিহার কথায় হিয়া আর মৌ দুজনই হেসে উঠল। ওয়াজিহা নিজেও পরিবেশ স্বাভাবিক করতে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে থাকে।

******

ওয়াজিহা কম্পিউটার ক্লাসে দুই মাস ধরে ভর্তি হয়েছে। বেশি দূর না হওয়ায় প্রতিদিন ক্লাস শুরুর বিশ মিনিট আগে বের হয় সে। আজও বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য। পিছন থেকে কারো হেটে আসার শব্দ শুনে ওয়াজিহা সেদিকে তাকায়। ফারাজ এসে সোজা ওয়াজিহার পাশে দাঁড়ায়। 


ওয়াজিহাকে লক্ষ্য করে বলে," রিকশার জন্য অপেক্ষা করছেন? আপনাদের তো গাড়ি আছে।"

" জি। গাড়ি আমি নিই না। ভাইয়া নিয়েই বের হয়।"

" ক্লাস কয়টায়? "

" এই তো সাতটায় শুরু হয় প্রতিদিন।"

" সাতটা থেকে আটটা? "

" হ্যাঁ। "

" আমার আজ বাড়ি আসা আটটা পনেরোতে। আপনি কি অপেক্ষা করবেন আপনি যেখানে ক্লাস করেন তার বিপরীত পাশে একটা কফিশপ আছে, ওখানে। "

" আমার আজ এমনিতেও ওখানে যেতে হতো। "

" কেন? কারো সাথে দেখা করার আছে?"

" না, না। ওখানকার কফিটা সুন্দর। কয়েকদিন হলো যাওয়া হচ্ছে না।"


খালি রিকশা চোখে পড়তেই ফারাজ ডাক দেয়৷ রিকশা এসে সামনে দাঁড়াতেই ফারাজ ওয়াজিহাকে রিকশায় ওঠার ইশারা করে বলে," আপনি যান, ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে। আমাদের দেখা হচ্ছে তবে।"

" আপনার দেরি হবে না? আপনি চাইলে এই রিকশাতেই আসতে পারেন। "

" ওই যে পিছনে আরেকটা এসেছে৷ আপনি চলে যান।"


ওয়াজিহা আর কথা না বাড়িয়ে রিকশায় উঠে বসে। ফারাজও গিয়ে পিছনের রিকশাটা থামায়। দুজনই দুজনের গন্তব্যের দিকে যেতে থাকে। 


ওয়াজিহা নির্দিষ্ট স্থানে এসে নেমে পড়ে। ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে ভাড়া দিচ্ছিল এমন সময় খেয়াল করে একটা মহিলা রিকশাচালককে ধমকে ধমকে কিছু বলছে। ওয়াজিহা ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। মহিলার হাতে ফোন, সামনে রিকশাচালকের দিকে ধরে আছে দেখে ওয়াজিহা বুঝতে পারে এখানে লাইভ চলছে। আশেপাশে দুই একজন মানুষ জমতে শুরু করেছে। 


ওয়াজিহা ক্যামেরার আড়ালে দাঁড়িয়ে রিকশাচালককে একবার পর্যবেক্ষণ করল। লোকটার বয়স পঞ্চাশোর্ধ। মুখের চামড়া কুচকে গিয়েছে, চুলে হয়তো বেশ আগেই পাক ধরেছে। চোখ দুটো লালবর্ণ ধারণ করেছে। চোখ দুটো ছোটো ছোটো, পানি টলমল করছে, চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।

ওয়াজিহা পাশে থেকে বলে উঠল," কী হয়েছে চাচা?"

লোকটা কাঁদো কাঁদো হয়ে ওয়াজিহার দিকে তাকিয়ে দেখল। বলল," মা রে গরিব হওয়ার চেয়ে ভিখারি হওয়া ভালো ছিল। মানুষের কাছে চাইলে ভিক্ষা তো অন্তত দিত। "


কথাটা শুনে যেন বুকের ভেতরটা জ্ব*লেপু*ড়ে যেতে থাকে ওয়াজিহার। ঠিক তখনই মহিলাটি ওয়াজিহাকে উদ্দেশ্য করে বলে," একদম গলে যাবেন না। এরা মানুষ দেখলেই টাকা চাওয়া শুরু করে, এদের জন্য রাস্তায় বের হওয়া যায় না। অসভ্য মানুষগুলো। "


হীরক রহস্য অনুচ্ছেদ ০১ ও ০২

ওয়াজিহা মহিলাকে শান্ত করে বলে," আচ্ছা আচ্ছা। লাইভটা বন্ধ করুন৷ উনি আপনার কাছে টাকা চেয়ে ভুল করেছে বুঝতে পেরেছি। তাই বলে এভাবে লাইভে গিয়ে দলবেধে অপদস্ত করার কিছু নেই। টাকা চেয়েছে দিলে দিতেন আর না দিলে উনি তো জোর করে নিতে পারত না। "


মহিলাটি লাইভ বন্ধ করতে অস্বীকার করলে ওয়াজিহা হাত থেকে ফোনটা নিয়ে লাইভ কে*টে ফোনটা সেই মহিলার হাতে ধরিয়ে দেয়। রিকশাচালককে জিজ্ঞেস করে," কী হয়েছে বলেন তো? উনার এত রেগে যাওয়ার কারণ কী?"


লোকটা রিকশা ছেড়ে বলল," শরীরটা অসুস্থ, বয়স হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত ঘরে শুয়ে ছিলাম। দুপুরে বউ কইল যে চাউল নাই, বাজারও নাই। রিকশা নিয়ে বের হয়েছি দুপুরে। ছয়শো টাকা পাইছি। রিকশা যেখান থেকে নিই ওখানে ভাড়া দিতে হয় পাঁচশো টাকা। বাকি একশো টাকা দিয়ে কী করব? শরীর দূর্বল এদিকে বাজার না নিয়ে গেলে না খেয়ে থাকতে হবে। উনার ভাড়া নব্বই টাকা, আমি শুধু বলছিলাম দশ টাকা একটু বেশি দিতে৷ না দিলে না দিত, আমি তো কেড়ে নিতাম না টাকা। এভাবে মানুষের সামনে আমারে অপমান করল।"


লোকটা কান্নায় ভেঙে পড়ল। মহিলাটি আরও কিছু কথা শুনিয়ে সেখান থেকে চলে গেল৷ লোকজনও ধীরে চলে যেতে থাকে। 

ওয়াজিহা নিজের ব্যাগ থেকে দুইটা এক হাজার টাকার নোট বের করে লোকটাকে দিয়ে বলে," আঙ্কেল এই টাকাটা রাখুন, এটা দিয়ে আজকের বাজার আর ওষুধ কিনে নিবেন। পৃথিবীর সব মানুষ যেমন ধনী হয় না সেরকম পৃথিবীর সব মানুষের সাহায্য করার মানসিকতা থাকে না। এদেশের মানুষ ব্যাংকে টাকা জমাবে, টাকার বিনিময়ে চাকরি নেবে, বিপদে পড়লে হাজার হাজার টাকা পুলিশের হাতে গুজে দেবে কিন্তু কান্না করে খিদের কথা বললে কেউ ভাত দেবে না। অথচ এদেশে নাকি কোনোকিছুর অভাব নেই। "


লোকটাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ওয়াজিহা সেখান থেকে চলে যায়। লোকটা তাকিয়ে ওয়াজিহার চলে যাওয়া দেখতে থাকে। হাতের টাকাটা দেখে আবারও চোখের পানি ফেলে। দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়৷ ভেতর থেকে ওয়াজিহার জন্য দোয়া বেরিয়ে আসে।

***

কম্পিউটার ক্লাস শেষ করে সবাই বের হয়েছিল আটটা দশে। ওয়াজিহার পরিচিত দুজন আবদার করে আজ তিনজন বসে আড্ডা দেবে। কিছুদূর গেলেই একটা হোটেল পাওয়া যায়৷ সেই হোটেলটা বেশ পরিচিত তাই তারা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেখানে যাওয়ার। ওয়াজিহা প্রথমে রাজি না হলে তাদের দুজনের জোরাজোরিতে সেখানে যেতে হয়। ফারাজকে কথা দিয়ে কথা রাখতে না পারায় ভীষণ খারাপ লাগছিল তার। 


তিনজনের খাওয়া দাওয়া করে বের হতে হতে রাত সাড়ে নয়টা বেজে যায়। ওয়াজিহা আগেই ভাইকে জানিয়ে দিয়েছিল। তিনজন বের হওয়ার পর ওয়াজিহাকে একটা রিকশায় তুলে দিয়ে নীতু আর শিমলা আরেকটা রিকশা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। 


ওয়াজিহার খারাপ লাগছিল ফারাজের জন্য। ব্যাগ থেকে ফারাজের ভিজিটিং কার্ডটা বের করে সেখানে থাকা নম্বরে কল দেয় সে৷ প্রথমবারে রিসিভ না হলে আবার কল দেয় ওয়াজিহা। 


দ্বিতীয়বারে কল রিসিভ হতেই ওয়াজিহা বলে ওঠে," হ্যালো, আমি ওয়াজিহা বলছি।"


ওপাশ থেকে জবাব আসে," কোথায় আপনি? ঠিক আছেন তো?"

" হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি।"

" আপনি কি বাসায় চলে গিয়েছেন?"

" না, আমার সাথে যারা ক্লাস করে ওখানে দুইটা মেয়ের সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে। ওরা জোর করে হোটেলে নিয়ে গিয়েছিল খাবার খেতে। আপনি কোথায় এখন? আপনাকে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে।"

" আমার যেখানে থাকার কথা ছিল সেখানেই বসে আছি এক ঘণ্টা তেত্রিশ মিনিট ধরে।"

" ইশ! আচ্ছা আপনি ওখানেই থাকুন আমি আসছি। প্রায় চলে এসেছি।"

" আমি সামনে দাঁড়াচ্ছি। আজ অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। অলরেডি নয়টা পয়তাল্লিশ বেজে গিয়েছে। বাসায় ফিরতে হবে।"

" আচ্ছা। সামনে এসে দাঁড়ান একসাথে বাসায় ফিরব।"


সাত মিনিটের মাথায় ওয়াজিহা কফিশপের সামনে চলে আসে। ফারাজ বাহিরে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছিল। ওয়াজিহাকে রিকশায় দেখতেই সেখানে এগিয়ে আসে। 


ওয়াজিহা রিকশার এক পাশে সরে বসে বলে," উঠে আসুন।"

" দুজন একসাথে সমস্যা হবে না?"

" না, আসুন তো।"


ফারাজ রিকশায় উঠে বসে। দুজনে এক রিকশায় বসলেও দুজনই ভেতরে ভেতরে বেশ অস্বস্তিবোধ করছে। দুজনই কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে আছে, রিকশা চলছে।


বাড়ির প্রায় কাছাকাছি এসে ওয়াজিহা বলে," আ আমি আপনাকে কীভাবে স্যরি বলব কিছুতেই বুঝতে পারছি না। তখন এরকম একটা ঘটনা ঘটে যাবে বুঝতেই পারিনি। আপনার নম্বরও ছিল না আমার কাছে। তারপর মনে পড়ল আপনি আমাকে একদিন আপনার ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলেন। ব্যাগে খুঁজতেই পেয়ে গেলাম তারপরই কল দিয়েছি কিন্তু আপনি এতক্ষণ অপেক্ষা করতে গেলেন কেন?"


ফারাজ মৃদু হেসে বলে," আমি মৌকে কল করেছিলাম। ও' বলল আপনি বাসায় ফিরেননি। মনে হলো হয়তো বাহিরে কোনো কাজে আটকে গেছেন তাই অপেক্ষা করছিলাম। একদম বিরক্ত হয়নি, খেলা চলছিল বাংলাদেশের। সেটাই দেখছিলাম বসে বসে।"

" কোনো প্রয়োজন ছিল কি? না, মানে আসলে বাহিরে দেখা করতে বলেছিলেন তো...."

পারলে ঠেকাও ( পর্বঃ ০৯ ) - দিশা মনি

" তেমন কিছু না। আপনার সাথে সেরকম করে কথা হয়নি। তাই.."


দুজনের মধ্যে আরও কিছু কথা চলতে থাকে। রিকশা এসে বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে থেমে যায়।  ওয়াজিহা ভাড়া দিতে চাইলে ফারাজ সেটা করতে দেয় না। ওয়াজিহাকে রাস্তা পার হয়ে ওপাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলে। ফারাজ গাড়িভাড়া দিচ্ছিল এমন সময় পিছন থেকে ওয়াজিহার চিৎকার শুনতে পেয়ে ফারাজ সেদিকে ঘুরে তাকাতেই দেখে ওয়াজিহা রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে দুই কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে চিৎকার করছে। ফারাজ দৌঁড়ে কাছাকাছি যেতেই দেখে ওয়াজিহার পায়ের কাছে বড়োসড়ো কিছু পড়ে আছে। ওয়াজিহার কাছে এসে দাঁড়াতেই ওয়াজিহা বলে ওঠে," বাঁচান, মে*রে ফেলে গেল ওরা। গাড়ি থেকে ফেলেছে। "


ফারাজ পায়ের দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে যায়। সারা শরীর কাঁপতে থাকে তার। কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে না দেখে মাথায় হাত দিয়ে কী করবে ভাবতে থাকে সে। 


ওয়াজিহা হাত স্পর্শ করবে ফারাজ ওমনি বলে ওঠে," ওটা লা*শ,  ধরবেন না একদম।"

 


পরের সিজনঃ মেঘ বিয়োগের মৌসুম সিজন ২

পর্ব ১৩


রাতে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার পাশে ফেলে যাওয়া লা*শ দেখে ওয়াজিহার অবস্থা খুব খারাপ। ফারাজ নাকে হাত দিয়ে চেক করতেই দেখে শ্বাস চলছে। রাস্তায় থাকতেই ফারাজ পুলিশকে কল করেছিল। পুলিশের কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে সাথে সাথে ওয়াজিহা আর ফারাজ মিলে মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। থানা কাছে থাকায় পুলিশের আসতে দেরি হয়নি। ওয়াজিহা নিজেও তার ভাইকে কল করে হাসপাতালে আসতে বলেছে। 


ওয়াজিহাকে বাহিরে বসিয়ে রেখে ফারাজ রোগীর কাছে চলে যায়। তার এখন ইমিডিয়েট চিকিৎসার প্রয়োজন। 


ওয়াজিহা বাহিরে বসে মনে মনে কিছু আওড়াচ্ছিল। স্পষ্ট মনে হতেই পুলিশকে জানিয়ে সে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে ওয়াহাজও চলে এসেছে। হাসপাতাল থেকে বের হয়েই ভাইকে দেখে ওয়াজিহা এক প্রকার দৌঁড়ে ভাইয়ের কাছে আসে। 


ওয়াহাজের দুই বাহু ধরে ওয়াজিহা বলে ওঠে," ভাইয়া আমাদের এখনই বের হতে হবে৷ আমি তোমাকে একটা গাড়ির নম্বর বলছি, তুমি প্লিজ খবর নিয়ে দেখো গাড়িটা কার?"

" শান্ত হও তুমি। এত রাতে আমরা কোথায় যাব? সময় দেখেছ তুমি? কোনোকিছুতে তাড়াহুড়ো করতে নেই। তুমি দেখেছ গাড়িতে কতজন ছিল?"

" যখন মেয়েটাকে ফেলে দিয়েছিল তখন দুজনকে দেখা গিয়েছিল আর একজন ড্রাইভার ছিল। "

" তোমাকে দেখেও সেখানে ফেলল মেয়েটাকে?"

" আমি গেইটের ভেতরে গিয়েছিলাম, বাহিরে বের হতে হতেই গাড়িটা চলে গেল। আমি তখন গাড়ির নম্বর দেখেছি।"


ওয়াজিহা গাড়ির নম্বর জানালে ওয়াহাজ সাথে সাথে গাড়ির ডিটেইলস জানার জন্য কাউকে কল করে। ওপাশ থেকে জানায় আগামীকাল সকালের মধ্যে জানিয়ে দেবে। ওয়াহাজও সম্মতি জানিয়ে কলটা কাটে৷ 


ওয়াহাজ বেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে," শোনো একটা কথা বলি৷ এই সমস্যাটা পারিবারিক কোনো সমস্যা না৷ ফারাজ আমাকে কল দিয়েছিল, সে জানিয়েছে এটা ধর্ষ*ণের কেস। আমি জানি আমার বোন প্রতিবাদী কিন্তু তুমি আগে সমস্ত অন্যা*য়ের প্রতিবাদ সাথে সাথে করলেও এখন তোমাকে সময় নিতে হবে। সময় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। আর হ্যাঁ শোনো তুমি পুলিশকে সর্বোচ্চ সাহায্য করবে। তবে একটা কথা কি জানো তুমি যাদের দেখেছ তারা যদি ধনী পরিবারের বিগড়ে যাওয়া জানো*য়ার হয় তাহলে তারা বেঁচে যাবে। "


দুজন হাসপাতালের ভেতরে চলে আসে। মেয়েটার সাথে তার ব্যাগ ছিল সেখান থেকে যে ফোনটা পাওয়া যায় সেটা দিয়ে বাড়িতে জানানো হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মেয়েটার বাবা-মা কান্না করতে করতে সেখানে উপস্থিত হয়। ফারাজ তখনো বের হয়নি ভেতর থেকে। সেখানে আরও কয়েকজন নার্স এবং ডাক্তার রয়েছে। 


চন্দ্রাবতী ( পর্ব ০৭ )

ওয়াহাজের কাধে মাথা দিয়ে বেলা বসে আছে। ওয়াহাজ, বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। 


রাত বারোটার দিকে ফারাজ বাহিরে আসে। মুখটা তার মলিন৷ ফারাজ এগিয়ে আসতেই মেয়েটার বাবা-মা ফারাজের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। 


মেয়েটার বাবা ভারীস্বরে বলে," কী হয়েছে আমার মেয়ের? ঠিক আছে তো?"


ফারাজ দুজনের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। বলে," হয়তো এই যাত্রায় আল্লাহ বাঁচিয়ে নিবেন। তবে আজ হয়তো জ্ঞান ফিরবে না। সকালের আশায় আছি, জ্ঞান ফিরলেও ফিরতে পারে।"

" আমার মেয়ে বেঁচে যাবে তো, ডাক্তার?"

" আল্লাহ ভরসা। মেয়ের জন্য দোয়া করুন৷ মা-বাবার দোয়া তো আল্লাহ কবুল করে নেয়।"


দুজন দরজার বাহিরে থেকে মেয়েকে দেখতে থাকে। মা তখনো কান্না করে যাচ্ছে। কান্না করতে করতে বলে," আমি বলেছিলাম মেয়েকে এত প্রশ্র‍য় দিও না।  ছেলেটা বিরক্ত করছে, কয়েকদিন মেয়েটা ঘরে থাকলে কী এমন হতো? এখন আমার মেয়েটার কী হবে?"


কথাটা শুনে ওয়াজিহা বলে ওঠে," ভাইয়া, তুমি মেয়েটার বাবার নম্বরটা নাও কোনোভাবে। তারা জানে, এই অবস্থার জন্য কে দায়ী।"


ওয়াহাজ বলে ওঠে," আমারও সেটাই মনে হচ্ছে। আমি নম্বর নিয়ে আসছি, অপেক্ষা কর।"


ওয়াহাজ দুই মিনিটের মধ্যে ওয়াজিহার কাছে আবার ফিরে আসে। মোবাইলের স্ক্রিনে নম্বরটা দেখিয়ে বলে," কাজ হয়ে গেছে।"


ওয়াজিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কঠোরকণ্ঠে বলে ওঠে," ভাইয়া আমি যদি তোমার অফারে রাজি হই? আমি আবার পুরোনো সেই দমে না যাওয়া 'আমি'টাকে জাগিয়ে তুলি?"

" আমি খুশি হব। সবরকম সাহায্য তুমি পাবে।"


ফারাজ পুলিশের সাথে কথা শেষ করে, বলে-কয়ে ওয়াহাজ আর ওয়াজিহাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। আজ তার বাড়ি ফেরা হবে না। মেয়েটার অবস্থা খুব খারাপ, কখন কী হয়ে যায় বলা যায় না। ফারাজ নিজের কক্ষে চলে যায়। দুজন নার্স পাহাড়ারত আছে। কোনোকিছু হলেই ফারাজকে জানাবে।

**

হাসপাতালে নিজের সাথে বেঁচে থাকার যুদ্ধে খানিকটা জয়ী হয়ে মেয়েটার জ্ঞান ফিরতে ফিরতে পরেরদিন বিকেল পাঁচটা বেজে যায়। শরীরের অবস্থা প্রচন্ড খারাপ ছিল গতকাল, আজ কিছুটা উন্নত হয়েছে। 


ফারাজ চেকাপ করে জানায় সে এখন আগের তুলনায় অনেকটা ভালো আছে। মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করায় মেয়েটার বাবা জানায় তার মেয়ের নাম 'নুসরাত'।


ওয়াজিহা সন্ধ্যার আগে মেয়েটার সাথে দেখা করতে এসে সবকিছু জেনে নেয়। তখনই বাহিরে থেকে একজন এসে জানায় গতকাল রাতে মেয়েটার সাথে যে তিনজন ছিল তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।


ওয়াজিহাও সেটা তার ভাইকে জানানোর জন্য কল দিতেই ওয়াহাজ জানিয়ে দিল সে এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগেই জেনেছে। তারা তিনজন সব স্বীকার করে নিলে আগামী সোমবারে আদালত রায় দিয়ে দিবে। 

**

সময় পানির প্রবাহের মতো অতি দ্রুত প্রবাহিত হলো। সকাল সকাল ওয়াহাজ বেরিয়ে গিয়েছে আদালতের উদ্দেশ্যে। ওয়াজিহার যাওয়ার কথা ছিল না মাঝখানে তার মনে হলো বিচারটা নিজ চোখে একবার দেখা উচিৎ। 


ওয়াজিহা তৈরি হয়ে বের হয়ে দরজা লক করার সময় মৌ-এর সাথে দেখা হয়ে যায়। 


ওয়াজিহা দরজা লক করে মৌকে দেখে বলে," কোথাও যাচ্ছ আপু?"

" হ্যাঁ, হাসপাতালে যাচ্ছিলাম একটু। তুমি কোথায় যাচ্ছ?"

হৃদয়ের নিকুঞ্জ নীড়ে-পর্ব ০৫

" আমার একটু প্রয়োজন আছে তাই বের হচ্ছি। আঙ্কেল-আন্টি ভালো আছে?"

" হ্যাঁ সবাই ভালো আছে। তুমি তো নুসরাত নামের মেয়েটার কেসের ব্যাপারে জানো তাই না? ভাইয়া বলছিল মেয়েটা নাকি সঠিক বিচার পাবে না।"

" দেশে আর কি সঠিক হচ্ছে বলো তো! এক একটা সুপারহিরো কেন আসে না সবকিছু সঠিক করতে!"


নিচে নামতে নামতে ওয়াজিহা মৌ-এর কাছে থেকে বিদায় নিয়ে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে পড়ে। বাহিরে এসে একটা রিকশা নিয়ে বাসস্টপেজে চলে আসে।


বাস সাড়ে দশটায় ছাড়ার কথা কিন্তু এগারোটা বেজে গেলেও বাস ছাড়ছে না দেখে কয়েকজন খুব ঝামেলা করতে শুরু করে। এদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে জন্য অস্বস্তি শুরু হয়েছে ওয়াজিহার। এতক্ষণে হয়তো বিচারকার্য শুরু হয়ে গিয়েছে। বাসের সিটে আর বসে থাকতেই মন চাইছিল না ওয়াজিহার।


বাস ছাড়তে দেরি হচ্ছে দেখে পিছনের সিটে বসা মধ্যবয়স্ক এক মহিলাকে ওয়াজিহা জিজ্ঞেস করে," আন্টি বাস ছাড়তে এতো দেরি করছে কেন?"

" এখানে কোন যেন নেতার ছোটো ভাই নাকি বাসে যাবে, তার আসতে দেরি হচ্ছে জন্য বাসও ছাড়ছে না। "


বিষয়টা একদমই ভালো লাগে না জন্য সিট থেকে উঠে ড্রাইভারকে নিজের সমস্যার কথা বলতে যাবে তখনই বাহিরে থেকে জানায় যার আসার কথা ছিল সে পৌঁছে গেছে। ওয়াজিহা চুপচাপ নিজের সিটে বসে যায়। দুই মিনিটের মাথায় কেউ এসে তার পাশে বসে৷ সাথের আরেকজন লোক আরেকসারির এক সিট পিছনে গিয়ে বসে।


বাস ছেড়েছে প্রায় আধাঘণ্টা। ওয়াজিহার পাশে বসা লোকটা বারবার তার কাধে মাথা রাখছে। সে বারবার সরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও লোকটা বারবার সেটা করেই যাচ্ছে৷ ওয়াজিহা বেশ বুঝতে পারছে লোকটা ইচ্ছে করে এমন করছে কারণ তার পাশে বসার পর থেকেই অন্যরকম করে আড়চোখে দেখছিল তাকে। এখন ঘুমোনোর অভিনয় করে বারবার ওয়াজিহাকে স্পর্শ করছে।


ওয়াজিহা ব্যাগ থেকে সেফটিপিন বের করে বাম হাতে রেখে ডান হাত দিয়ে আবারও লোকটার মাথা উঠিয়ে দেয়। সেফটিপিনটা কাধে লাগিয়ে সেটা না আটকে ওভাবেই খুলে রাখে। 


মিনিট দুয়েকের মধ্যে লোকটা আবারও ওয়াজিহার কাধে মাথা রাখতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে। বাসের সবাই তৎক্ষনাৎ সেদিকে তাকায়। ওয়াজিহা তখনো নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। লোকটা নিজের কপালের পাশে থেকে ধীরে ধীরে সেটা খুলে রাগীচোখে ওয়াজিহার দিকে তাকায়।


" আপনি এটা ইচ্ছে করে করেছেন তাই না?"

" কী ইচ্ছে করে করেছি?"

" সেফটিপিন তো আগে ছিল না এখানে, আপনি মাত্র এখানে রেখেছেন?"


লোকটার কথায় ওয়াজিহা নিশ্চিত হয়ে যায় তার মানে সে এতক্ষণ ঘুমের ভান ধরে নারীশরীর স্পর্শ করছিল। ওয়াজিহা তার দিকে ফিরে চোয়াল শক্ত করে বামগালে চড় বসিয়ে দেয়। আশেপাশের মানুষ সার্কাস দেখার মতো সেদিকে দেখছে। 


মরীচিকাময় ভালোবাসা পর্বঃ-১৩(বোনাস পর্ব)

বেলার পাশে বসা লোকটা গালে হাত দিয়ে রক্তবর্ণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এক পর্যায়ে সে বেলার দিকে চড় দেওয়ার জন্য হাত এগুতেই বেলা দ্বিতীয়বারের মতো চড় দেয়। আশেপাশের কয়েকজন সেদিকে এগিয়ে এসে দুজনের বিবাদ থামাতে চায়।


কী হয়েছে জানতে চাইলে বেলা বলে," বাস ছেড়েছে আধাঘণ্টার একটু বেশি সময় ধরে। উনি পনেরো মিনিট ধরে ঘুমের নাটক করে আমার কাধে মাথা রেখেই যাচ্ছেন। বারেবারে আমার হাটুর ওপর হাত রাখছে। 


পাশে থেকে একজন বলে ওঠে," বয়স হয়েছে এমনও তো না। এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে কীভাবে মানুষ? বাসে উঠলেই কিছু মানুষ বংশের পরিচয় দিতে শুরু করে।"


আরেকজন সেই লোকের পক্ষ নিয়ে বলে," বাসে উঠে অনেকের ঘুমানোর অভ্যেস আছে। উনি হয়তো তাই ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমালে মাথা ঘড়িয়ে কাধে যেতেই পারে তাই বলে এরকম সিনক্রিয়েট করবেন নাকি? এত সমস্যা থাকলে বাসে কেন উঠেছেন? নিজস্ব গাড়ি কিনে নিন।"


বেলা এবার লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলে," বাসে আপনি যেমন টিকেট কেটে উঠেছেন সেরকম আমিও৷ আপনাদের যদি মেয়েদের কাধে মাথা রেখে এতই ঘুমানোর শখ তাহলে বাড়ি থেকে বউ নিয়ে বের হলেই তো পারেন৷ আর এই লোক মোটেও ঘুমাচ্ছিল না৷ সে অস্বাভাবিকভাবে আমাকে স্পর্শ করছিল। বারবার ইচ্ছে করে কাধে মাথা রাখছিল, শরীর স্পর্শ করছিল। কোনটা ইচ্ছেতে হয় আর কোনটা এমনিতেই হয় সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। "


বেলা নিজের ব্যাগটা কোলের ওপর নিয়ে বলে," উনি বারবার ইচ্ছে করে এমন করছিল দেখে আমি সেফটিপিন  দিয়ে রেখেছি, কপালে লাগার সাথে ঘুম ভেঙে গেছে তাই না? উনি যদি ঘুমেই থাকতেন তাহলে বুঝতেন কীভাবে যে এই সেফটিপিন আগে লাগানো ছিল না, মাত্র লাগিয়েছি?"


কারো মুখে আর কোনো কথা নেই৷ বেলার পাশে বসা লোকটা তবুও নিজের ইচ্ছেমতো বলেই যাচ্ছে।


বেলা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে," আপনাদের মতো পুরুষদের জাস্ট মে*রে ফেলে রাখা উচিৎ। হাত দিয়ে বাজে স্পর্শ করলে হাত, পা দিয়ে স্পর্শ করলে পা কে*টে দেওয়া উচিৎ। চোখ দিয়ে খারাপ নজর দিলে চোখ তু*লে নেওয়া উচিৎ আর আপনার মতো ঘুমের নাটক করা অভিনেতা হলে মাথা আলাদা করে দেওয়া উচিৎ। "


বেলা বাসের দায়িত্বে থাকা লোককে বলে লোকটাকে তার পাশে থেকে তুলে দেয়৷ লোকটার সম্মানহানি হওয়ায় বাস থেকেই নেমে যায় গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে।


কিছু লোক বেলার কাজের প্রশংসা করতে থাকে। বেলার পাশে এসে বসা মহিলাটি বেলার গালে হাত দিয়ে মৃদু হেসে বলে," ওয়েল-ডান বেটি।"


***

বেলা আদালতে পৌঁছে ওয়াহাজকে কল করে কলে পাচ্ছিল না। বাহিরে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বারবার কল দিচ্ছিল বেলা। ওয়াহাজ তবুও কল রিসিভ করেনি। উপায় না পেয়ে বেলা ফারাজকে কল দেয়। রিং হতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ হয়ে যায়।


" ফারাজ বলছেন? "

" হ্যাঁ বলছি।"

" রায় কতদূর?"

জ্বীনের খাটিয়া ( পর্ব-০৪) - রিয়াজ রাজ

" রায় শেষ। "

" মানে? এত তাড়াতাড়ি? "

" হ্যাঁ। "

" কোথায় আছেন? আমার ভাইয়া কোথায়?"

" আপনার ভাইয়া রেগে এখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। বাহিরে কোথাও আছে হয়তো।"

" কলে পাচ্ছি না ভাইয়াকে। আচ্ছা, কী হলো বিচারে?"

" সবাই ছাড়া পেয়ে গেছে।"

" কীহ! কী বলছেন আপনি?"

" হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট চেঞ্জ করে দিয়েছে। এটা অ্যাক্সিডেন্ট কেস বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। টাকাওয়ালার কোনো বিচার হয় না।"

" হাসপাতাল থেকে কীভাবে রিপোর্ট চেঞ্জ করে দেওয়া হয়? আর নুসরাতের বাবা-মা?"

" উনারা কারো সাথে কোনো কথা বলছেন না। হয়তো ভয় দেখানো হয়েছে। কোথায় আপনি?"

" আমি এইতো মেইন গেইটের পাশের আমতলায় দাঁড়িয়ে। "

" ওখানে দাঁড়ান আমি আসছি।"


বেলা পাঁচ মিনিট ধরে এক জায়গাতেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এতো বড়ো একটা অবিচার কীভাবে হতে পারে সেটাই ভাবছে সে। পাশেই ফারাজ দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর নুসরাত বাবা-মা তাদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে চলে গেল। একবার শুধু বেলার দিকে করুণচোখে নুসরাতের বাবা তাকিয়েছিল। 


বেলা একটা চেয়ারে বসে পড়ে। একে একে সবাই বাহিরে চলে আসছে। নুসরাতকে ধর্ষ*ণ করা তিনজন ছেলেকে একসাথে দেখতে পায় বেলা। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। তিনজন ছেলের সাথে আরও কিছু লোক রয়েছে। পাশে থেকে একজন তিনজনের মধ্যে একজনকে বেলাকে দেখিয়ে বলে," ভাই, এই মেয়ে।"


সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায় ছেলেটা। বেলার দিকে এগিয়ে গিয়ে গাল চুলকে হেসে বলে," তাহলে মিস, আমাদের আবার দেখা হচ্ছে। সেবারও আমিই জিতব।"


আমাদের মেঘ বিয়োগের মৌসুম গল্পের লিংক গুলো কেমন লাগে কমেন্টে জানাবেন।

পর্ব ১৪


<

পাঁচ মাসের মাথায় প্রাক্তন স্বামী ধ্রুবর কাছে থেকে ফোনকল পায় বেলা। এই সময়টাতে প্রাক্তন স্বামীর কল পাওয়া হয়তো খুব একটা অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার না। একটা সময় এসে ছেড়ে যাওয়া মানুষটা ঠিকই উপলব্ধি করতে পারে তার করা কাজটা ঠিক ছিল না। 


ফোনস্ক্রিনে 'ধ্রুব' নামটা জ্বলজ্বল করছে। ইচ্ছে তো করছে ফোনটা রিসিভ করে গলাটা শুনতে কিন্তু স্মৃতি যেন ধিক্কার জানাচ্ছে এরকম ইচ্ছেকে। স্ক্রিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল বেলা। কল যতক্ষণ না কেটে গেল সে ততক্ষণ দেখতে থাকল। কলটা কেটে গেলে ফোনটা উলটো করে বিছানায় রেখে দিল সে। 


দরজা নক করার শব্দ পেয়ে বেলা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। বাহিরে ওয়াহাজ দাঁড়িয়ে আছে। বেলা ভেতর থেকে বলে ওঠে," ভাইয়া, কিছু বলবে? ভেতরে এসো।"


ওয়াহাজ ভেতরে এসে বিছানায় বসে। মাথানিচু করে বেলাকে বলে," আমি তোমাকে যা যা বলেছি সেগুলো তুমি ভুলে যাও। তোমাকে আমি আর এসবে জড়াতে দেব না। আমার এখন মনে হচ্ছে আমি কাজটা ঠিক করিনি। আমি এসবের সাথে জড়িয়ে ছিলাম আমিই শেষ পর্যন্ত থাকব আর তাছাড়া এখানে কম মানুষ নেই। আমি আমার বোনকে বিপদে ফেলতে চাই না।"

মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০২


বেলা চুপচাপ তার ভাইয়ের কথা শুনছিল। সে নিজেও প্রথমদিকে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। শ্বশুরবাড়িতে থাকতে শুধু তথ্য যোগাড় করে দিতে হতো তাকে আর তার জন্য কিছু টাকা পেত সে৷ তার মনে হয়, প্রতিটা মানুষের উচিৎ নিজের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যা*য়ের শা*স্তি দেওয়া।  যেমন তার মা করেছিল। 


বেলা তার ভাইয়ের কাছে গিয়ে বসে। নিচের দিকে তাকিয়ে বলে," ভাইয়া তোমার মনে আছে, আম্মা যখন ছোটোমায়ের ভাইকে শা*স্তি দিয়েছিল তখন তুমি কত খুশি হয়েছিলে? আম্মাকে একা পেয়ে যখন ওই মামা, আম্মার সাথে বাজে ব্যবহার করেছিল তখন কিন্তু আম্মা নিজেকে রক্ষা করেছিল। দা দিয়ে হাতের খানিকটা কে*টে দিয়েছিল তারপর? তারপর ধীরে ধীরে যখন সবকিছু জানাজানি শুরু হলো গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই আম্মাকে দোষ দিতে শুরু করল৷ তারপর কী হলো? আমাদের শৈশব নষ্ট করে আম্মা নিজে ম*রে গিয়ে বেঁচে গেল। "


" আমার জীবনের প্রথম নারীকে হারিয়েছি এখন আর তোকে হারাতে চাই না বোন। আমি আজ বুঝতে পেরেছি এ সমাজের সবক'টা মানুষ ভেতরে ভেতরে প*শু। তাদের সাহায্য করলে ভালো তবে সেটা কোনোভাবে তাদের মনের মতো না হলে আসল রূপ দেখা যায়। আমি নিজেই ভেবেছি আর দেশে থাকব না।"

" কী হয়েছে ভাইয়া? তুমি এরকম কেন বলছ?"

" কিছু হয়নি। আমি ভেবেছি তোকে নিয়ে বাহিরে চলে যাব।"

" হঠাৎ এরকম চিন্তাভাবনা কেন ভাইয়া?"

" আজ যারা তিনজন শা*স্তি না পেয়ে বেরিয়ে গেল তাদের আইনের মানুষই সাহায্য করেছে বের হতে। যাদের এতো বিশ্বাস করে কাজ করছিলাম তারাই কি না এভাবে বদলে গেল! যদি কখনো নিজে একা কিছু করতে পারি তাহলে করব। এই অন্ধকার জগতে তোকে কিছুতেই নিতে আসব না আমি। 


ওয়াহাজ রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ওয়াজিহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সে কখনোই ঝামেলায় জড়াতে চায়নি তবে ঝামেলায় যদি জড়িয়েই যায় তাহলে সেটার মোকাবেলা অবশ্যই করা প্রয়োজন।

***

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে প্রতিদিনের মতো ছাদে যায় বেলা। রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। হাতের ফোনটা তৎক্ষণাৎ বেজে ওঠে। অপরিচিত নম্বর দেখে প্রথমে রিসিভ করবে না ভেবেও পরিচিত কেউ হতে পারে ভেবে কলটা রিসিভ করে সে। 


ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিজেই বলে ওঠে," আসসালামু আলাইকুম। কে বলছিলেন?"


ওপাশের ব্যক্তি তখনো নিরব দেখে বেলা আবারও বলে, " চুপ করে আছেন কেন? কল দিয়েছেন কি মজা করার জন্য? আমি ফোন রাখছি।"


তড়িঘড়ি করে ওপাশে থেকে জবাব আসে," প্লিজ কল কেটো না।"


বেলা বুঝতে পারে এটা ধ্রুবর গলা। শক্তগলায় বলে," কল দিয়েছেন কেন আপনি?"

" তোমাকে খুব মিস করছিলাম বেলা।"

" বিষয়টা হাস্যকর হয়ে গেল না?"

" হয়তো হলো তবুও সত্যি কথাটাই বললাম। তুমিও হয়তো চেয়েছিলে আমি তোমাকে কল করি তার জন্য এখনো নম্বর চেঞ্জ করোনি। "

" লিসেন, এটা আমার ব্যবহার করা প্রথম নম্বর। সবার সাথে যোগাযোগ এই নম্বরে, আমার কোনো পিছুটান নেই। আপনার মতো পুরুষের জন্য তো একদমই না। দ্বিতীয়বার যোগাযোগ করার মতো ভুল আর করবেন না।"

" বেলা প্লিজ শোনো।"

" যাকে ভালোবেসে বিয়ে করলেন তাকে দিয়ে চলছে না এখন? সে তো খুবই সুন্দরী। আপনি যা চেয়েছিলেন তাই হয়েছে। আপনার বউ ছিলাম তখন আমি তাই আপনার ইচ্ছেটা পূরণ করেছি এখন আমি আপনার কেউ না। আমি আপনাকে ওই সময়টাতেও চেয়েছি যখন আপনার কেউ ছিল না। এমন একটা সময় এলো যখন আপনি ছাড়া আমার কেউ ছিল না, আপনি আমাকে ছুড়ে ফেলে দিলেন! 


বেলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলে," ভালো হবে আপনি আর কখনো আমাকে ফোন না দিলে। নিজের চরিত্র আর খারাপ করবেন না। বউকে ভালো রাখুন।"


বেলা দেরি না করে কল কেটে ফোন বন্ধ করে ফেলে। খোলা আকাশের দিকে চেয়ে রবকে কিছু বলতে থাকে। 


পিছন থেকে কেউ ভারী গলায় বলে ওঠে," আপনি এখন ছাদে!"


বেলা পিছনে তাকিয়ে দেখে ফারাজ একপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। ভ্রু বিস্তৃত করে বলে," আপনি সিগারেট খান? আপনি তো ডাক্তার। শরীরের বিষয়ে আপনার বেশি সচেতন থাকা উচিৎ। "

" ডাক্তারও তো মানুষ। "

" সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষ*তিকর, জানেন না? ক'দিন পর দেখবেন স্ত্রী,ছেলে-মেয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই শ্বাস নিতে পারছেন না।"


ফারাজ হাতের জ্ব*লন্ত সিগারেটের টুকরো অংশ রেলিংয়েই চেপে ঘষে আ*গুন নিভিয়ে দেয়। অন্ধকারে বেলাকে আবছায়া দেখা যাচ্ছে। সেদিকেই তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে ফারাজ। রেলিংয়ে রাখা সিগারেটের প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে আ*গুন দিয়ে সেটা জ্বা*লিয়ে নেয়। আরও একবার সিগারেটে ঠোঁট ছুঁইয়ে নেয় সে।


ছাই হালকা ঝেড়ে ফেলে বলে ওঠে," নারী যে পুরুষের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষ*তিকর সেটা কেউ বলে না কেন?"


বেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে," কোন কোন পুরুষ যে নারীর জন্য স্বয়ং ক্যা*ন্সারের ভূমিকা পালন করে সেটা জানেন? আমি,আপনি, আমরা যদি বিরো*ধিতা শুরু করি তাহলে শেষ হবে না। মোট কথা, মানুষ সঠিক না হলে সবকিছুই ভুল।"

" আপনি আমার জন্য কতটুকু সঠিক?"


বেলা ফারাজের কথার অর্থটা আন্দাজ করতে পারে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সেখান থেকে চলে আসবে এমন সময় ফারাজ আবার বলে ওঠে," বললেন না তো?"


বেলা থেমে যায়। পিছনে ঘুরে বলে," আপনার হয়তো আমার সামনে আসা উচিৎ না। নারী যেকোনো পুরুষের তাকানো দেখেও বুঝতে পারে সে কী বলতে চাইছে। আমি যতটুকু বুঝেছি, ততটুকু বুঝে মনে হচ্ছে আমার সামনে আপনার আসা উচিৎ না।"

" বুঝেও তাহলে কেন নিষেধ করছেন? আপনি একটা পুরুষের মনের শান্তি চান না?"

" আপনাকে মাথায় রাখতে হবে আমি ডিভোর্সি। আমার পাঁচ বছরের সংসার ছিল।"

মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০৩

" আমি কাপুরষ নই।"

" মানে?"

" ভালোবাসব, হৃদয় পো*ড়াবো আর অতীত ভেবে পিছিয়ে যাব? এমন কাপুরষ আমি নই।"

" আমি আস্ত একটা বিষের শিশি, হাত থেকে মেঝেতে পড়লে ভেঙে গুড়িয়ে যাব, ভেঙে ফেলা মানুষের গতি থামিয়ে দেব। ভালোবেসে কেউ গ্রহণ করলে বিষের মতো শিরা উপশিরায় পৌঁছে মৃ*ত্যু ঘটাবো।"


বেলা আর দাঁড়াল না। ছাদ থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে চলে আসে। এতদিন একা একটু সময় পার করার জন্য ছাদে যেত সে। আজকের মতো ঘটনা যদি প্রতিদিন ঘটতে থাকে তবে শুধু ছাদ নয় এই বাসাটা চেঞ্জ করতে হবে। জীবনে দ্বিতীয় পুরুষের আগমন সুখকর হয় না। 


এখন পড়ছেন মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন

পর্ব ১৫


বৃহস্পতিবার-

দুই ভাইবোন আজ বাসা পরিস্কারের কাজে নেমেছিল। বেলা এ বাড়িতে আসার পর নিজেই সবকিছু করেছে এতদিনে। হঠাৎ কল আসায় ওয়াহাজ নিজের রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর এসে এসে বেলার কাজ থামিয়ে দিয়ে বলে," এখন এসব রাখো আর কিছু করতে হবে না। আমার সাথে তোমার বের হতে হবে।"


বেলা হাতের ঝাডু রেখে বলে," কোথায় যেতে হবে?"

" পাসপোর্ট অফিসে।"

" আজই!"

" হ্যাঁ। আগামীকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। আমার বন্ধু কল করেছিল, এখনই যেতে বলল।"

" ঠিক আছে। আমি তাহলে রেডি হয়ে নিই।"


বেলা ময়লাগুলো উঠিয়ে রেখে নিজের রুমের দিকে যাবে ঠিক তখনই ওয়াহাজ বেলাকে ডেকে বলে," তোমার কোনো আপত্তি নেই তো? পরে যেন না শুনি যে আমি জোর করে তোমাকে বাহিরের দেশে পড়তে পাঠিয়েছি। আর এখনই তো সব বলা যাচ্ছে না। আগামী সপ্তাহে জানতে পারবে সবকিছু। সব ব্যবস্থা আগে তাড়াতাড়ি করতে হবে। "


বেলা কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবার বলে," ভাইয়া, আমি নিজে থেকেই করছি সবকিছু। আমার একবার বিয়ে হয়েছিল, ডিভোর্স হয়েছে জন্য ঘরের এক কোণায় পড়ে থাকব না৷ আমি কখনোই মনে করি না ডিভোর্স হওয়ায় আমার কোনো অন্যায় হয়েছে। আমি ওখানে আমার পড়াশোনা শেষ করে আবার দেশে ফিরব। "

" আর ফারাজ!"


মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-১০+১১

ওয়াহাজের কথায় চমকে যায় বেলা। ভ্রু বিস্তৃত করে তাকায় ওয়াহাজের দিকে। ফারাজের কথা তো ওয়াহাজের জানার কথা না। বেলা এ বাসায় আসার কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝেছিল ফারাজ তাকে পছন্দ করা শুরু করেছে। যতটা সম্ভব হয়েছে সে ফারাজকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে। ফারাজ যেদিন তাকে রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করতে বলেছিল সেদিনই বেলা আন্দাজ করেছিল যে ফারাজ হয়তো তাকে পছন্দ করে সেই কথাটাই জানাবে। বেলাও এটা ভেবেই রাজি হয়েছিল যে সে 'না' করে দেবে, ফারাজকে বোঝাবে সবকিছু সহজ হয় না। 


বেলাকে চুপ থাকতে দেখে ওয়াহাজ বলে ওঠে," আমি চাই না ফারাজের বাড়ির সবাই বলুক তুমি তাদের ছেলেকে ফাঁসিয়েছ। আর তার চেয়ে বড়ো কথা নুসরাতের কেসের ওই তিনজনের মধ্যে একজনকে বাড়ির সামনের বাজারে দেখেছি হয়তো তোমার খোঁজেই আসা যাওয়া করছে এদিকে। আমি কোনো রকম সমস্যায় তোমাকে জড়াতে চাই না। তোমার জীবন যে ঝামেলাবিহীন চলে তার ব্যবস্থা করছি আমি।"


বেলা মাথানিচু করে বলে," উনাকে নিয়ে আমার তো কোনো চিন্তাভাবনা নেই ভাইয়া। উনি সেদিন..."


বেলাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ওয়াহাজ বলে উঠল," আমি সবকিছু দেখে নেব। যাও তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। অনেক কাজ বাকি আমার। "


বেলা আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়। বেলা জানে তার ভাই একবার তাড়াতাড়ি তৈরি হতে বললে সেটা তাড়াতাড়িই করতে হবে, দেরি হলে বারবার তাড়া দিতে থাকবে।

***

দুপুর আড়াইটা-

মৌ বেলাদের দরজার বাহিরে থেকে কলিংবেল বাজাচ্ছিল। দরজা না খোলায় চেক করে দেখে দরজা লক করা আছে। সকাল থেকে তার মন খারাপ। বেলাকে কল দিয়ে কোনোভাবেই পায়নি সে। ওয়াহাজকেও কল দিয়ে লাভ হয়নি। 


ফিরে যাবে এমন সময় সিঁড়ি থেকেই বেলার গলা শুনতে পায় মৌ। তাকিয়ে দেখে বেলা আর ওয়াহাজ বাহিরে থেকে আসছে৷ 


মৌকে বাহিরে দেখে বেলা এগিয়ে গিয়ে বলে," কী ব্যাপার আপু? বাহিরে কেন?"


ওয়াহাজের দিকে একবার দেখে আবার বেলার দিকে ফিরে বলে," সকাল থেকে তোমাকে কল করছিলাম।"


বেলা মৃদু হেসে বলে," ভুল করে ফোনটা বাসায় রেখে গিয়েছিলাম। একটু তাড়াহুড়োয় বের হতে হয়েছিল তো!"

" কেন? কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?"

" পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলাম।"

" সত্যি সত্যিই তাহলে দেশ ছাড়ছো?"


বেলা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে, " হ্যাঁ ছাড়ছি। ছাড়তে হচ্ছে তো।"


মৌ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে," তুমি দেশ ছাড়ছো আর আমি বাড়ি ছাড়ছি, দারুণ না!"


বেলা একবার ভাইকে দেখে নিয়ে ভাঙা ভাঙা শব্দে মৌকে বলে," তু তুমি বাড়ি ছাড়ছো মানে?"

" আমাকে আজ দেখতে আসবে, বেলা। একঘণ্টার মধ্যে চলে আসবে। বাড়িতে আয়োজন চলছে।" কথাটা বলেই ওয়াহাজের দিকে তাকায় মৌ। 


ওয়াহাজ কিছু না বলে দরজা আনলক করে ভেতরে চলে যায়। মৌ আর বেলা তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে। মৌ নিজের ফ্ল্যাটের দিকে যেতে যেতে বলে," তোমার ভাইয়া আমাকে একটুও বুঝতে পারল না! আমাকে নিয়ে একটু ভাবলে কী ক্ষতি হতো তার?"


বেলা পিছন থেকে মৌ-এর হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলে," চলো, তুমি আজ ভাইয়ার সাথে কথা বলবে।"

" না, ওয়াজিহা। নিজে মুখ ফুঁটে এসব আর কীভাবে বলি? বললে তো এতদিনে বলতামই।"


মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০৫

ওয়াহাজ শার্টের বোতাম খুলছিল এমন সময় দরজায় নক করার শব্দ পেতেই খোলা বোতামটা আবার আটকে নেয় সে।


দরজা খুলে দেখে বাহিরে বেলা দাঁড়িয়ে। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই বেলা বলে ওঠে," ভাইয়া, আর কত? মেয়েটা তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তোমার উচিৎ আঙ্কেলের সাথে কথা বলা। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে যেতে দিতে নেই ভাইয়া। সব মানুষ ছেড়েও যেতে চায় না। তোমার উচিৎ মৌ আপুকে, আপু থেকে আমার ভাবি করে দেওয়া। এটাই সঠিক সময়।"


" আমার এসবে জড়াতে একদম ভালো লাগছে না। সে যদি আমাকে পছন্দই করত তাহলে একবার বলতে তো পারতো তাই না? আমাকে সে পছন্দ করে এরকম কিছুই তো আমি কখনো দেখিনি বা শুনিনি তাছাড়া আমিও তাকে নিয়ে এরকম কিছু ভাবিনি।"

" এবার ভাবো। তুমি এখন আঙ্কেলকে বলবে ছেলেপক্ষ যেন রওয়ানা না দেয়।"

" পাগলামি করবে না, ওয়াজিহা।"

" আমাকে বাহিরে পাঠাতে চাইছো না? ধরো এটাই তার শর্ত।"

" আমি কোনো শর্তে তোমাকে বাহিরে পাঠাচ্ছি না। "


বেলা ওয়াহাজের দুই বাহু ধরে আবদারের স্বরে বলে," প্লিজ ভাইয়া।"


ওয়াহাজ আদরমাখা হাসিতে বেলার দিকে তাকায়। দুই গালে হাত রেখে বলে," তুমি খুশি হবে?"

" খুউউব।"

" তোমার খুশির জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি।"

" আপাতত আঙ্কেলকে রাজি করো আর বিয়েটা করে নাও। আমি শান্তিতে দেশ ছাড়তে চাই। "

**

বেলা ঠেলেঠুলে ওয়াহাজকে মৌদের বাসায় নিয়ে এসেছে। ফ্ল্যাটে ঢুকেই হাতের বামপাশে রান্নাঘর। মৌ-এর ফাহমিদা বেগম রান্নাঘরে রান্না করছিল। ওয়াহাজ আর বেলাকে দেখে তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন উনি। মৌকে ডেকে বসার ব্যবস্থা করতে বলে।


বেলা মৃদু হেসে বলে," আন্টি এত ব্যস্ত হতে হবে না। আপনি তো রান্না করছিলেন হয়তো।"

" হ্যাঁ মা, আর বলো না। মৌকে আজ দেখতে আসবে। কিছুক্ষণ আগে কল করে বলল ওদের সাথে ছেলের বোনের আসার কথা। মেয়ের আসতে দেরি হচ্ছে। পাঁচটার দিকে আসবে হয়তো।"


ওয়াহাজকে উদ্দেশ্য করে বলে," তুমি এই বাসায় আসবে এটা তো ভাবাও বোকামি। আজ কী মনে করে আসলে তুমি? ফ্ল্যাট ভাড়া করে রেখেছ তিন বছর। মাঝে মাঝে এসে থেকেছ কিন্তু এখানে তো আসোইনি৷ "


ওয়াহাজ কী বলবে বুঝতে পারছে না। এমন একটা দিনে নিজের বিয়ের কথা বলতে এসে নিজেও বিপদে পড়ে যাচ্ছে। অপমান করে বের করে দেয় নাকি সেটাও ভাববার বিষয়। আজকের দিনে এসব বললে অপমান করে বের করে দেওয়াও অসম্ভব কিছু না। 


ওয়াহাজকে চুপ করে থাকতে দেখে বাম হাতের কনুই দিয়ে ধাক্কা দেয় বেলা। ওয়াহাজ সাথে সাথে বলে ওঠে," আঙ্কেল কোথায়, আন্টি? "


ফাহমিদা বেগম রুমটা দেখিয়ে দেয়। মৌ এতক্ষণে রুমের বাহিরে এসে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। বেলা তার দিকে তাকাতেই ইশারায় জানতে চায়- কী হচ্ছে এখানে?

বেলাও মৃদু হেসে ওয়াহাজকে নিয়ে মৌ-এর বাবার কাছে চলে যায়। 


ওয়াহাজ দরজায় দাঁড়িয়ে সালাম দিলে বই থেকে মুখ তুলে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওয়াহাজকে ভেতরে আসার অনুমতি দেয়। বইটা পাশে রাখতে রাখতে বলে," আরে ওয়াহাজ যে! তা বাবা, আজ কি পথ ভুল করে এসেছ নাকি? আসো আসো এখানে এসে বসো।"


মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০৪

ওয়াহাজ একবার বেলার দিকে তাকায়৷ ইশারায় তাকেও আসতে বলে মৌ-এর বাবার পাশে গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ আলাপচারিতা চলতে থাকে। 


দুজনের কথা চলছে, বেলা পাশে বসে বসে অপেক্ষা করছে ওয়াহাজ কখন আসল কথাটা বলবে। বেলা পাশে বসে থেকে ওয়াহাজকে বারবার ইশারায় কথাটা বলতে বলছে অথচ ওয়াহাজ সেটা কিছুতেই বলতে পারছে না। 


বেলা আর অপেক্ষা করতে না পেরে নিজেই বলে ওঠে," আঙ্কেল, মৌ আপুকে যারা দেখতে আসছে তাদের নিষেধ করে দেন। আমি আর ভাইয়া মৌ আপুর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। মৌ আপুকে আমি ভাবি বানাতে চাই। আমার ভাইয়াকে তো আপনারা চিনেনই৷ তার কোনো খারাপ অভ্যেস নেই। ওয়াহাজ ভাইয়া মৌ আপুর জন্য একদম পারফেক্ট। আমার ভাইয়ার মতো ছেলে আপনি সারা বাংলাদেশ তন্নতন্ন করে খুঁজলেও পাবেন না।"


এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামে বেলা। ওয়াহাজ আর সামনে বসা মৌ-এর বাবা এক পলকে বেলার দিকে তাকিয়ে আছে। বেলাও তাদের দুজনের দিকে বারবার তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে যেন কী না কী বলে ফেলেছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠতে যেন বেলা হাফ ছেড়ে বাঁচে। 


" আমার কল এসেছে, আমি আসছি। তোমরা কথা বলো।" বলে ফোনের দিকে তাকাতেই চমকে যায় বেলা। হঠাৎ এতদিন পর এই মানুষটা ফোন কোনোভাবেই আশা করেনি সে। বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ায় সে।


এখন বৈশাখী মেঘের কাছে জল চেয়ে তুমি কাঁদবে

পর্ব ১৬


সেদিন প্রাক্তন স্বামীর কল আর আজ প্রাক্তন ননদের কল পেয়ে কোনো এক অজানা ভয়ে বুকটা কাঁপছে বেলার। অতীতের সবকিছু শেষ করে এসেছে সে তবুও যেন ওরা পিছু ছাড়ছে না। তবে কি সিমটা দেশ ছাড়ার আগেই আরও একবার চেঞ্জ করতে হবে!


বাহিরে এসে কলটা রিসিভ করে বেলা। ওপাশ থেকে শান্তশিষ্ট গলায় রিমি বলে ওঠে," কেমন আছেন, ভাবি?"


বেলা এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দেখে বলে," কল দিয়েছেন কেন?"

" আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করল।"

" আমি এত ভালো মানুষ হলাম কবে থেকে? আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে! আমি কি ভুল শুনছি?"

" প্লিজ ভাবি।"

" নতুন ভাবি ভালোবাসছে না? এতো ভালোবাসায়, অপছন্দ করা পুরোনো প্রাক্তন ভাবিকে মনে পড়ছে? আমার মতোই ভালোবাসছে সে? সবাই তো নিশ্চয়ই খুব ভালো আছেন! এই ভালো সময়ে খারাপ মানুষকে মনে করার কারণ কী? দেখাতে চাইছেন যে আপনারা খুব ভালো আছেন?"

" ভাবি ভুল বুঝছেন।"

" সঠিক আমি তোমাদের আর কোনোদিনই ভাবতে পারব না রিমি। আমাকে নেক্সট টাইম কল করিও না। কখনোও না।"

" আপনাকে ছাড়া আমরা ভালো নেই৷ সবকিছু অন্যরকম হয়ে গেছে। কোনোকিছু আমাদের ইচ্ছেমতো হয় না।"

" সবকিছুর ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। বিচার মানুষ করলে তো ফাঁকফোকর দিয়ে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু আল্লাহ ছেড়ে দেন না। গুণে গুণে সবকিছুর ফল তোমরা পাবে৷ "

" পাচ্ছি তো ভাবি। আপনি কি ফিরে আসতে পারবেন? আমি নিজে ভাইয়ার সাথে কথা বলব।"

" একদিন নতুন ভাবির জন্য তুমি কতকিছু করেছিলে। কত আনন্দ করছিলে আমি চলে আসব শুনে, আহা! আর আজ কি না আমাকে ফিরতে বলছ? সবকিছু এতো সহজ ভাবো কেন? সবকিছু এতো সহজ ভাবলে পস্তাতে হবে খুব।"

মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০৮

" উনি কোনো কাজ করে না বাসার সব কাজ আমাকে আর আম্মাকে করতে হয়। তবুও সারাক্ষণ খারাপ ব্যবহার করতেই থাকে৷ ভাইয়াকেও ছাড়ে না। কথায় কথায় বলে," আমাকে প্রথমজন পাওনি, আমি এখানেই মাটি কাঁমড়ে থাকব, সবাইকে দেখে নেব।"


বেলা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। এসব তার একদমই শুনতে ইচ্ছে করছে না। ওপাশে রিমি কথা বলেই যাচ্ছে। অতীত বারবার ফিরে আসতে চাইছে যেটা বেলার কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না। 


বেলা রিমিকে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠে," শোনো রিমি, তোমাদের যা ইচ্ছে হয় তোমরা করো তবে এভাবে আমাকে আর কখনো কল করবে না। আমি ভাই কোনোভাবেই চাই না যে আমার অতীত আমার কাছে ফিরে আসুক৷ যে থুথু ফেলেছি সেটা আর আমি কোনোভাবেই ফিরিয়ে নিতে পারব না। তোমরা দুই ভাইবোন আমাকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করো। এরপর থেকে আমার নাগাল এমনিতেও পাবে না৷ আমি আজই সিমচেঞ্জ করব। ভুলেও আমার দিকে পা বাড়াবে না তোমরা। রাখছি।"

" ভাবি..."

" আমি তোমার ভাবি নই রিমি।"

" আমাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?"

" সবাইকে ক্ষমা করতে নেই। সবাইকে ক্ষমা করে দিলে নিজের ওপর অবিচার করা হবে। "

___


বেলা রুমে এসে দেখে ওয়াহাজ চুপচাপ বসে আছে। মৌ-এর বাবা মুহিব আহসান বারান্দায় দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছেন। বেলা ধীরপায়ে ওয়াহাজের পাশে গিয়ে বসে। 


বেলাকে দেখেই ওয়াহাজ বলে," এতক্ষণ লাগলো আসতে? আমাকে একা রেখে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না ওয়াজিহা।"

" এসব ছাড়ো, আঙ্কেল কি বলল? তোমার শ্বশুর হতে রাজি হয়েছে?"


ওয়াহাজ বারান্দায় তাকিয়ে ইশারা করে বলে," অন্যকারো শ্বশুর হবে না জন্য কল করে মৌকে যারা দেখতে আসতে চেয়েছিল তাদের নিষেধ করে দিচ্ছে। প্রথমদিকে একটা ধমক দিয়েছে।"


বেলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, " কাকে? তোমাকে?"

" হ্যাঁ। "

" আল্লাহ! কেন?"

" আজকে বলতে এসেছি তাই। তুমি চলে যাওয়ার পরে আমি চুপ করে বসে আছি আর উনি বলে উঠলেন- ছেলেদের কেন মুখ ফুটবে না? আজকের দিনে চিপায় পড়ে বলতে আসছ? এর আগে কী করছ? এমন তো না যে আমার মেয়েকে আজই পছন্দ হয়েছে তোমার। "


কিছুক্ষণ পর মুহিব আহসান বারান্দা থেকে রুমে এলেন। ফোনটা পাঞ্জাবির পকেটে রাখতে রাখতে বললেন," নেহাৎ তুমি আমার ভীষণ পছন্দের জন্য আমার আরেক রূপ দেখলে না। তুমি ছেলে খারাপ হইলে সোজা আমার মেয়ের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার দায়ে বাসা থেকে বের করে দিতাম।"


ওয়াহাজ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল," বিয়ে হলে এমনিতেও আপনার বাসায় থাকব না আঙ্কেল।"

" কী বলছ"

" বউ নিয়ে শ্বশুর বাড়ি থাকব,ঝগড়া লাগলে আপনার মেয়ে বাপের বাড়ি যেতে পারবে না। আমি তার রাগ ভাঙিয়ে বাসায়ও নিয়ে আসতে পারব না। কী একটা মুশকিল হয়ে যাবে না বলেন?"

" আমি বিয়েতে রাজিই হলাম না আর তুমি বিয়ের আগেই ঝগড়ার কথা বলছ? কী ছেলে তুমি!"


পাশে থেকে বেলা বলে ওঠে," আঙ্কেল আপনি নিশ্চয়ই বিয়ের আগে ঝগড়ার কথা বলেননি তাই বলে কি আন্টির সাথে আপনার ঝগড়া হয় না? ভাইয়া তো ঠিকই বলেছে, রাগ করে বাপের বাড়ি না গেলে কি ভালো লাগে নাকি!"


" তোমাদের চুপচাপ স্বভাবের বাহিরে কথায় হারানোর আরেকটা স্বভাব আছে সেটা জানতাম না তো!" মুহিব আহসান কথাটা বলেই নিজের জায়গায় বসে মৌকে ডাকলেন তার ইচ্ছে আছে কি না।


মৌকে ডাকার সাথে সাথে মৌ নিজের রুম থেকে বের হয়ে বাবার কাছে আসবে তখনই ফাহমিদা বেগম এগিয়ে এসে মেয়েকে বলেন," কী হচ্ছে ভেতরে বল তো? কী নিয়ে কথা বলছে এতক্ষণ ওরা? তোর বাবা বাহিরেও আসছে না৷ আমার তো ওদিকে যেতেই ভয় করছে। চা করেছি, নিয়ে যা তুই। "

" ঠিক আছে, দাও।"


মৌ চা নিয়ে দরজায় নক করতেই মুহিব আহসান ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। 

সবাইকে চা দিয়ে দাঁড়াতেই মুহিব আহসান মেয়েকে প্রশ্ন করেন," ওয়াহাজকে তোমার কেমন লাগে?"

মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০৬


বাবার এমন প্রশ্নে বেশ ঘাবড়ে যায় মৌ। বেলার দিকে অসহায় চোখে তাকায় সে। বেলা মুচকি হেসে মাথা উপর নিচ ঝাঁকিয়ে ভালো খবরের আভাস দেয়। 


মৌকে চুপ থাকতে দেখে মুহিব আহসান আবার বলে ওঠেন," ওয়াহাজ ছেলে হিসেবে খারাপ না। তোমারও বিয়ে আসছে অনেকদিন ধরেই। আমি তোমার জন্য ওয়াহাজকে পছন্দ করেছি। আমার মনে হয় তোমার কোনো আপত্তি থাকার কথা না তবুও যদি কিছু বলার থাকে তাহলে বলতে পারো।"


মৌ মাথা নিচু করে বলে," বাবা, তুমি যা ভালো মনে করবা সেটাই হবে। আমার কোনোকিছুতেই আপত্তি নেই।"


বেলা সহাস্যমুখে বলে ওঠে," আজ যাদের আসার কথা ছিল ওই পক্ষের ছেলের সাথে বিয়ে হলেও আপত্তি নেই?"


মৌ কিছু না বলে বাবার দিকে তাকিয়ে আবার বেলার দিকে তাকায়৷ মুখে কিছু বলতে না পারলেও চোখ দিয়ে যেন অনেক কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে। যার অর্থ - এখনই চুপ করবে, আর একটা কথাও না। বেশি কথা বললে অবস্থা খারাপ করে দেব।

_____


ওয়াহাজ সকাল সকাল কোনো একটা কাজে বেরিয়েছে। নাস্তা করার পর বেলাকে বলে বেরিয়েছে সে। এদিকে মৌ বাসায় হাজির আজ সে বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবে। অনেক বলে ফারাজকে রাজি করিয়েছে সে। এ বাসায় এসে দেখে ওয়াহাজ বাসায় নেই৷ ফারাজকে বাহিরে বসিয়ে রেখে মৌ বেলার রুমে চলে যায়। 


" তোমার ভাইয়া তো বাহিরেই আছে। উনাকে কল দিয়ে ডেকে নেব, চলো। তুমি না গেলে আমার একদমই ভালো লাগবে না। ভাইয়াও কিছু বুঝবে না কেনাকাটায়৷ সেফটির জন্য তাকে নিয়ে যাচ্ছি।"


বেলা, ওয়াহাজের ফোনে কল দিতে দিতে বলে," ভাইয়া কল রিসিভ করছে না। তাকে না জানিয়ে বাহিরে যাই কীভাবে?"

" ফারাজ ভাইয়া তো আছে। কোনো সমস্যা হবে না। "

" কিন্তু..."


" উনাকে বল, আমার সাথে গেলে আমি সেটার সুযোগ নিয়ে উনাকে বিয়ের প্রোপোজাল দেব না বা জোর করে কাজী অফিসে নিয়ে যাব না। আমাকে যে ধরণের ছেলে ভাবছে আমি সেরকম ছেলে নই। "


দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলে ফারাজ। মৌ আর বেলা একসাথে বাহিরে তাকায়। 


বেলা আমতা আমতা করে বলে," আপনি এরকম করবেন আমি সেটা কখন বললাম?"

" তাহলে তৈরি হয়ে নিন। আমি সুযোগকে কাজে লাগাবো না।"


মৌ পর্যায়ক্রমে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে," কী চলছে তোদের মাঝে বল তো?"


এখন পড়ছেন একটি বাস্তব প্রেম কাহিনী

পর্ব ১৭


তিনজন বাড়ি থেকে বেরিয়েছে বিয়ের শপিংয়ের উদ্দেশ্যে। গাড়ি থেকে নেমে তিনজন সোজা শপিংমলের ভেতরে চলে যায়। বেলা তখনো মাঝেমাঝে ওয়াহাজকে কল দিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর কলটা রিসিভ হলো।


একটু দূরে চলে আসে বেলা। ফোনটা কানে নিয়েই বলে ওঠে," তোমাকে কখন থেকে কল দিচ্ছি খেয়াল আছে তোমার?"

" কেন?"

" তোমাদের বিয়ের শপিং করতে এসেছি।"

" টাকা?"

" আমার কিছু বাসায় ছিল। আপাতত ওগুলো নিয়ে এসেছি।"

" এড্রেস বলো, আমি এখনই আসছি।"


বেলা এখানকার এড্রেস দিয়ে ভেতরে চলে আসে। মৌ শাড়ি দেখছিল।  বেলাকে দেখেই বলে ওঠে," দেখো তো শাড়িটা কেমন লাগছে?"

" তোমার পছন্দ হলে ঠিক আছে। বিয়ে তোমার, এই দিনে তোমার পছন্দের সবকিছু পরবে। যদি তোমার ভালো লাগে তাহলে নিয়ে নাও।"

" আমার ভালোই লাগছে এটা।"

" তাহলে নিয়ে নাও। "


মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০৯

মৌ আরও কিছু শাড়ি দেখতে থাকে। বেলা মৌ-এর বাহু ধরে এগিয়ে এনে বলে," তোমার হবু বর আসছে কিন্তু। আমি জায়গার ডিটেইলস বলে দিয়েছি। এতক্ষণে হয়তো চলেই এসেছে প্রায়। দোকানের নামটা টেক্সট করে বলে দিয়েছি। এখন এখান থেকে বের হওয়া যাবে না।"


মৌ অবাক হয়ে বেলার দিকে তাকিয়ে বলে," উনি আসছেন?"

" হ্যাঁ, আসছেই তো। তোমার শপিং করে দেবে তার জন্য আসছে।"

" তাহলে আমি এখন কিছুই কিনব না। উনার পছন্দে কিনব।"

" সেটা তোমার ইচ্ছে।"


ওয়াহাজের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারা। ফারাজ বসা থেকে উঠে বাহিরে থেকে কয়েকবার হেটেও এসেছে ওয়াহাজের জন্য। 

পনেরো মিনিটের মধ্যে ওয়াহাজ নির্দিষ্ট জায়গায় এসে পৌঁছায়। ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করে নেয়। একদিনে সবকিছু কেনা শেষ হয় না বিধায় আগামীকাল আসার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। মৌ আর ওয়াহাজ কথা বলছিল এমন সময় তাদের চোখের আড়ালে ফারাজ একটা শপিং ব্যাগ বেলার দিকে বাড়িয়ে দেয়। বেলা ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চায়- এটা কী?


ফারাজ মৃদু হেসে বলে," প্রেম তো গ্রহণ করলেন এই ছোটো ভালোবাসাটুকু গ্রহণ করুন। এটার বিনিময়ে ভালোবাসতে বলব না। বিয়ের দিনে এটা পরবেন, আপনাকে এই রঙের শাড়িতে হয়তো অনেক ভালো লাগবে।"


বেলা একবার মৌ আর ওয়াহাজের দিকে তাকিয়ে তাদের দেখে নেয়৷ ওয়াহাজ যেহেতু ফারাজের বিষয়টা জানে তাই তার সামনে কিছুতেই ফারাজের সাথে কথা বলা উচিৎ হবে না বলে মনে করে সে।


বেলা ফারাজকে উদ্দেশ্য করে বলে," আমি এটা নিতে পারব না।"

" কেন?"

" আমি পাঁচ বছর সংসার করেছি, আমি জানি কোনটা করা উচিৎ আর কোনটা করা উচিৎ না৷ আপনি প্লিজ আমাকে অসস্তিতে ফেলবেন না। "

" গিফটটা নিলে খুশি হব।"

" কাউকে খুশি করে চলার দায়ভার আমার নেই।"


ফারাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বেলার মুখের দিকে নীরবকণ্ঠে বলে ফেলে," কী অদ্ভুদ বিষয় তাই না?

আমরা তাদেরই ভালোবেসে ফেলি যারা আমাদের ভাগ্যে থাকে না। যে ভালোবাসে সে মনেপ্রাণে চায় ভালোবাসার মানুষটার সাথে থাকতে কিন্তু সেটা ভালোবাসার মানুষটা চাইলেও সমাজ চায় না আবার সমাজ চাইলেও সেই মানুষটা চায় না।"

" এখানে আপনার ভালোবাসার মানুষ এবং সমাজ কেউই চাইছে না। সব ভালোবাসার সমাপ্তিটা সুন্দর হতে নেই। থাকুক না কিছু গল্পে হাহাকার,কষ্ট আর প্রিয় মানুষকে কাছে না পাওয়ার আক্ষেপ।"

_____ 


ওয়াহাজ নতুন একটা বাসা ঠিক করতেই সকালে বের হয়েছিল। বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হতেই সে নতুন বাসার খোঁজ চালাচ্ছিল। সকাল সকাল নতুন একটা ফ্ল্যাটের খোঁজ পেতেই বেরিয়ে গিয়েছিল সেটার উদ্দেশ্যে। নতুন বাসাটা তার ভালো লেগেছে। তারা যে এলাকায় আছে সেটারই পাশের এলাকায়। বাসায় দুইটা বেডরুম, ছোটো একটা ড্রয়িং প্লাস ডাইনিংরুম, রান্নাঘর, দুইটা ওয়াশরুম,দুইটা রুমেই বেলকনি সব মিলিয়ে বাসাটা ওয়াহাজের পছন্দ হয়েছে। শপিং শেষ করে সেটা বেলা আর মৌকে দেখানোর জন্য সেখানে নিয়ে যায়। ফারাজের কাজ পরে যাওয়ায় আগেই শপিংমল থেকে চলে গিয়েছে। ওয়াহাজ বেলা আর মৌকে নিয়ে বাসা দেখে বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর আড়াইটা বেজে যায়। তারা ঠিক করে ওই বাসাতেই উঠবে এবং খুব তাড়াতাড়ি বাসায় আসবাবপত্র নেওয়া শুরু করবে। ওয়াহাজ জানায় বাড়িওয়ালার সাথে সে রাতেই কথা বলবে।


সাড়ে তিনটার দিকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা বই নিয়ে সময় কাটাচ্ছিল বেলা। হঠাৎ তার মনে পড়ে ফারাজের দেওয়া শাড়িটার কথা। তখন ফারাজের জোরাজুরিতে ব্যাগটা নিয়েছিল ঠিকই কিন্তু শাড়িটা দেখেইনি সে। বিছানা থেকে উঠে তার জন্য কেনা জিনিসপত্রের ব্যাগগুলো থেকে ফারাজের দেওয়া ব্যাগটা বের করে সে। 


মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০৭

গাঢ় সবুজ রঙের একটা শাড়ি। সেটা নেড়েচেড়ে দেখে বেলা। শাড়িটার ভাজ খুলে কাধের ওপর ছড়িয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কী সুন্দর শাড়িটা। মনে মনে ফারাজের পছন্দের তারিফ করতে থাকে সে। পরক্ষণেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়, শাড়িটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়ানো ভেতর থেকে ভেঙে গিয়েও ভাইয়ের ভালোবাসার শক্তির জোরে দাঁড়িয়ে থাকা নিজেকে দেখতে থাকে সে। 

______


মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে মায়ের সাথে ছোটো বোনের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছে ফারাজ। মা ফাহমিদা বেগম বলে ওঠেন," শোন বাবা, তোর বোনের বিয়ে হয়ে গেলে কিন্তু এবার আমি তোকে বিয়ে দেব। আর কত বাড়িটা এমন ফাঁকা থাকবে বল তো? এতদিন তবু মৌ ছিল সামনে সপ্তাহ থেকে তো সে আর এ বাসায় থাকবে না। এ বাড়িতে একা একা আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে। "


ফারাজ মৃদু হেসে বলে," তোমার ছেলেকে কেউ বিয়ে করবে না, আম্মা। তোমার ছেলেকে ভালোবাসা যায় না।"


ফাহমিদা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলানো থামিয়ে বলেন," আমার ছেলের মতো ছেলে কি আর একটাও আছে নাকি? পেশায় ভালো একটা ডাক্তার, এত সুন্দর একটা চেহারা তাকে কি না কেউ বিয়ে করবে না? একবার শুধু বিয়ে করবি বল, আমি আজ থেকেই পাত্রী দেখব।"

" সবাইকে কি আর বিয়ে করা যায় আম্মা? গেলেও কি ভালোবাসা যায়?"


ফাহমিদা বেগম সন্দিগ্ধ চোখে ছেলের দিকে তাকান। বড়ো উৎকন্ঠায় জানতে চান," তোর কিছু হয়েছে, বাবা?"


ফারাজ মিথ্যে হাসি হেসে বলে," কী হবে, আম্মা? কিচ্ছু হয়নি। "

" আমি তোর মা হই। মাকে মিথ্যা বলবি?"


ফারাজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে," মিথ্যা তো বলতে চাই না আম্মা।"

" সত্যিটা বল আমায়। আমি কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি তুই বাসায় সেরকম কোনো কথা বলছিস না। হাসপাতালে বেশি সময় থাকছিস আবার বাড়িতে থাকলেও নিজের ঘরেই সবসময় খিল এঁটে থাকছিস। কিছু হয়েছে, বাবা?

" হচ্ছে তো অনেককিছুই শুধু মাঝেমধ্যে সহ্য করতে পারছি না। কান্না আসছে কিন্তু ছেলে মানুষ বলে কথা, ছেলেদের তো কান্না করা একটা অপরা*ধের মতো।"


ছেলের কথায় আশ্চর্য হন ফাহমিদা বেগম। ছেলে এরকম একটা সময় পার করছে আর তিনি জানেন না, বুঝতেই পারেননি। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন," কাউকে পছন্দ করিস, বাবা? আমাকে বল তুই। আমি তোর বাবার সাথে কথা বলব।"

" সে-ই তো রাজি না, আম্মা। তোমরা কথা বলে আর কী করবে? "

" কে সে? আমি কি চিনি? তুই আমাকে শুধু বল, আমি নিজে রাজি করাবো তাকে।"

" তার আগে একটা সংসার ছিল, আম্মা। তুমি কি পারবে তাকে মেনে নিতে আমার জন্য।"

" এসব কেমন কথা ফারাজ? তুই যেমন, তোর জন্য সেরকম মেয়েই প্রয়োজন।  তুই কেন ওরকম কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছিস?"

" আমি ভালোবাসি তাকে, আম্মা। তুমি তো জানোই তোমার ছেলেকে। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেলেও তার সাথে এ বিষয়ে জোর আমি করতে পারিনি কখনো। একবার জানিয়েছি কিন্তু সে 'না' করে দিয়েছে। এতগুলো দিন পর এসে বুঝতে পারছি আমার চাওয়াটাই ভুল।"

" হ্যাঁ। এসব মন থেকে দূর করে দাও। অসম্ভব কিছু মনে জায়গা দিও না।"

" আমার ভালো থাকাই এখন স্বপ্ন। দূরত্ব বেড়েই চলেছে, আমি আর ভালো থাকা যেন দুই মেরুর বাসিন্দা।"


ফাহমিদা বেগম কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছেন হয়তো কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কথা না এগিয়ে ছেলেকে একটা কথাই বললেন," বোনের বিয়েতে মনোযোগ দাও, ফারাজ। বোনের বিয়েতে সমস্যা হতে পারে এরকম কিছু করার কথা মাথাতেও এনো না।"


মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০১

ফারাজ উঠে বসে৷ মায়ের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে," আমি আর কী করব। দেখি ভাগ্যে কী আছে।" বলে মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুম থেকে ওয়ালেট নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাহিরের উদ্দেশ্যে।

______


দুদিন হলো নতুন বাসা গোছগাছ শুরু করেছে বেলা আর ওয়াহাজ। এ বাসার প্রায় সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নতুন বাসায় নেওয়া হয়েছে। বেলা ওয়াহাজের সাথে গিয়ে একটু একটু করে সাজিয়ে রেখে এসেছে। তানিয়া মাহি। আজ কিছু জিনিসপত্র কিনতে হবে জন্য ওয়াহাজ বেলাকে তার সাথে বের হতে বলেছে। জিনিসগুলো মূলত মৌ কিনতে বলেছে। তার পছন্দের একটা ডেকোরেশন করা রুমের ছবি দিয়ে বলেছে তাদের রুমটা যেন সেভাবে সাজানো হয়। আপাতত কিছুটা এরকম হলেই হয়ে যাবে আর বাকিটা পরে সে সাজিয়ে নিবে। বেলাকে সবকিছু ডিটেইলস জানিয়ে দিয়েছে সে৷ ওয়াহাজকে কিছু বলার সাহস তার এখনো হয়ে ওঠেনি। ওয়াহাজ কয়েকবার জানতে চেয়েছে তার কোনো পছন্দ আছে কি না রুম ডেকোরেট করার জন্য, মৌ বারবার জানিয়েছে ওয়াহাজের পছন্দমতো ডেকোরেট করলেই হবে। ওয়াহাজের আড়ালে বেলাকে সে নিজের পছন্দের কথা জানিয়েছে। বেলাও নিজের হবু নতুন ভাবির কথামতো রুম সাজাতে জিনিসপত্র কিনতে বের হবে। 


বাসা থেকে রেডি হয়ে বের হয় সে। ওয়াহাজ কিছুক্ষণ আগেই কল করে বের হয়ে রাস্তার সামনে দাঁড়াতে বলেছে। 


বেলা বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার সামনে এসে দাঁড়ায়। রাস্তার দুই পাশেই তাকিয়ে বারবার দেখতে থাকে ওয়াহাজ আসছে কি না। আসছে না দেখে বেলা ওয়াহাজকে কল করে। রিং হতেই রিসিভ হয়ে যায় ওপাশ থেকে।


বেলা আবারও রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলে," কোথায় ভাইয়া?"

" এই তো প্রায় চলে এসেছি। জাস্ট দুই মিনিট অপেক্ষা করো। বের হয়েছ?"

" হ্যাঁ। আমি তো তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেইটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি। "

" আচ্ছা থাকো, আমি আসছি। "


বেলা কল কেটে আবার ফোনেই ডুবে যায়। সেখানেই দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটাঘাটি করতে থাকে। মেসেঞ্জারে মেসেজ আসতেই সেখানে গিয়ে দেখে মৌ টেক্সট করেছে। দুটো শাড়ির ছবি দেখিয়ে জানতে চেয়েছে কোনটা বেশি সুন্দর।


বেলা ভালো করে ছবি দুইটা দেখে জানায় হালকা গোলাপি রঙের শাড়িটা সুন্দর। সাথে সাথে ওপাশ থেকে মেসেজ আসে," তাহলে তোমার জন্য আমি এটা নিচ্ছি। "


বেলা বুঝতে পারেনি শাড়িটা মৌ তার জন্যই কিনবে বলে পছন্দ করিয়েছে। সে তৎক্ষনাৎ রিপ্লাই করে," আমার অনেক শাড়ি আছে আর সেদিন তো কেনা হলো। আমার আর শাড়ি লাগবে না।" 


ওপাশ থেকে আর রেস্পন্স পেল না সে। ফোনটা হাতে রেখেই সামনের দিকে তাকাতেই বাইকে দুজনকে দেখে ছানাবড়া হয়ে যায়। একটা শিশি থেকে তরল জাতীয় কিছু তার দিকে ছুড়ে দেয় তারা। সাথে সাথে পিছন থেকে কেউ উলটো দিকে টেনে নেয় বেলাকে।  


হাতে সেই তরলের কিছু অংশ ছিটে পড়তেই বেলা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে," আহ্ আমার হাত জ্ব*লে গেল গো।"


পড়ুন আজব প্রেম কাহিনী সিজন ২ in facebook

পর্ব ১৮


ফোনটা হাতে রেখেই সামনের দিকে তাকাতেই বাইকে দুজনকে দেখে ছানাবড়া হয়ে যায়। একটা শিশি থেকে তরল জাতীয় কিছু তার দিকে ছুড়ে দেয় তারা। সাথে সাথে পিছন থেকে কেউ উলটো দিকে টেনে নেয় বেলাকে।  


হাতে সেই তরলের কিছু অংশ ছিটে পড়তেই বেলা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে," আহ্ আমার হাত জ্ব*লে গেল গো।"

রফিক চাচা তাড়াহুড়ো করে বেলাকে ধরে নেয়। আম্মা আম্মা করে চিৎকার করতে থাকে। বেলার এই অবস্থা দেখে রফিক চাচা কান্না করা শুরু করে দিয়েছে। ততক্ষণে গাড়ি এসে তাদের সামনে থামে। দুজনকে এভাবে দেখে ওয়াহাজ তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে আসে। 


মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০২

" কী হয়েছে রফিক চাচা?"

" দেখেন না, ওয়াজিহা আম্মারে দুইটা ছেলে এ*সি*ড মে*রে পালাইছে।"


ওয়াহাজ বেলার দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা চোখ বন্ধ করে কষ্ট সহ্য করার চেষ্টা করছে। ওয়াহাজ পকেট থেকে টাকা বের করে রফিক চাচার হাতে দিয়ে বলে," বড়ো দেখে দুইটা পানির বোতল নিয়ে এসে গাড়িতে বসবেন। আমি ওয়াজিহাকে পিছনের সিটে বসিয়ে দিচ্ছি। অনবরত পানি ঢালবেন। জলদি যান

"


রফিক চাচা সেখানে আর দেরি না করে দোকানের দিকে দৌঁড়ে চলে যায়। ওয়াহাজ তাড়াতাড়ি করে বেলাকে গাড়িতে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে বুকের সাথে নিয়ে বলে," কিচ্ছু হবে না বোন। আর একটু সহ্য করো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।"


রফিক চাচা পানি নিয়ে চলে আসলে বেলার পাশে বসে হাতে পানি ঢালতে বলে নিজে ড্রাইভিং সিটে চলে যায়। এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করা শুরু করে অন্যহাত দিয়ে ফোনটা বের করে ফারাজকে কল দেয়। ফারাজের অফটাইম থাকায় তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করতে সক্ষম হয়।


ওয়াহাজ জলদি বলে ওঠে," ফারাজ, ওয়াজিহাকে কেউ বা কারা যেন এ*সিড নিক্ষেপ করেছে। মুখ তো বেঁচে গিয়েছে তবে ছিঁটেফোঁটা হাতে লেগেছে। তুমি ব্যস্ত থাকলেও একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে ওয়াজিহার জন্য ফ্রি হয়ে যাও প্লিজ। পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে আসছি আমরা।"

___


বেলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার সাথে সাথে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে একটা দিন অন্তত এখানে রাখতে হবে সম্পূর্ণ চিকিৎসার জন্য। আগামীকাল সকালে চলে যেতে পারবে। 


নার্স বেরিয়ে গেলে ওয়াহাজ এসে বেলার বেডের পাশে চেয়ার টেনে বসে। বেলা জানালার বাহিরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিল। ওয়াহাজের উপস্থিতিতে তার দিকে তাকায়।


ওয়াহাজ বেলার উদ্দেশ্যে বলে," কারা ছিল? কাদের এতো বড়ো সাহস হলো তোমার সাথে এরকম করার?"

" নুসরাতের কেসের ওই তিনটা ছেলের মধ্যে দুজন। আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনই দুজন বাইকে করে যেতে যেতে এরকম করেছে। রফিক চাচা উলটো দিকে টেনে না নিলে এসি*ড এসে আমার মুখে পড়তো।"

" ওরা কি জানে না, তোমার একটা ভাই আছে? খুব ভুল করেছে। এর জন্য জীবন না দিতে  হয় ওদের।"


দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেলা। এসব নিয়ে তার আর কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছে না৷ সম্ভব হলে নিজেই ওই জানো*য়ারগুলোকে খু**ন করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখতো। 


কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় ওয়াহাজ। বেলা আবার জানালার বাহিরে তাকায়। নার্স এসে দরজায় নক করে। বেলা বাহিরে তাকিয়েই নার্সকে ভেতরে আসতে বলে।


নার্স হাতটা ভালো করে দেখে বলে," হাতের জন্য কি খুব কষ্ট হচ্ছে?"


বেলা আনমনে বলে ওঠে," " পৃথিবীতে সবচেয়ে  কষ্টের জিনিস কী জানেন? কেউ সত্যিকারের ভালোবাসে জেনেও তার ভালোবাসা গ্রহণ করতে না পারা।"

" জি?"


বাহিরে থেকে ফারাজ নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলে," আপনি যান আমি দেখছি।"


ফারাজের গলা শুনে বেলা বেশ চমকে যায়। আনমনে বলা কথাটা ভাবতেই কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করে তার। তবুও কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকে। 


নার্স চলে গেলে ফারাজ কেবিনে এসে চেয়ারটায় বসে হাত দেখতে দেখতে বলে," এতো কষ্ট পাচ্ছেন তবুও কেন গ্রহণ করছেন না আমায়? একটু ভালোবাসলে কী এমন ক্ষতি হবে আপনার? থেকে যান না আমার সাথে সারাজীবনের জন্য।"


ফারাজের কথায় তার দিকে তাকায় বেলা। ভ্রু কুচকে বলে," কিছু বললেন?"

" না।"

" হুম। ভাইয়া কোথায়, জানেন কিছু?"

" না তো। আচ্ছা শোনেন, মৌ এসেছিল৷ তখন তো কেবিনে কাউকে আসতে দেওয়া হচ্ছিল না তাই ফিরে গেছে। রান্না করে নিয়ে আসবে একেবারে। কী খাবেন বলুন। আমি মৌকে বলে দেব।"

" কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।"

" হাত কি এখনো জ্বা*লাপো*ড়া করছে?"

" হ্যাঁ করছে তো। সহ্য করে নিচ্ছি।"

মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০৩

" আমাকে সহ্য করে নেওয়া যায় না?"


বেলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে," আপনি বারবার এভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করবেন না।"

" কেন? অনুভব করলে সেটা প্রকাশ করলে দোষের কী? আপনারও জানা উচিৎ আপনাকে কেউ ভালোবাসে।"

" জানা উচিৎ নয়। আমি যে জীবন পার করেছি সেটার পর তো একদমই নয়। যে ভালোবাসা সময়ের সাথে বিলীন হয়ে যায় সেই ভালোবাসা আমার প্রয়োজন নেই৷ আমার জীবনে আমার ভাই ছাড়া আর কোনো পুরুষ আসতে পারবে না। সব পুরুষ আমার জন্য নিষিদ্ধ। আশা করছি আপনি পরবর্তীতে এসব আমাকে বলবেন না। আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক আছে এবং নতুন একটা সম্পর্ক তৈরি হতে যাচ্ছে সেদিকে আপনার খেয়াল রাখা উচিৎ। "


ফারাজ আর কিছু না বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়৷ যেখানে ফলাফল শূন্য সেখানে রচনা লিখে জানালেও কোনো লাভ হয় না৷ 

________


হাসপাতালে একটা দিন কেটে গিয়েছে। ওয়াহাজ সারাদিন বোনের আশেপাশে থেকেছে আজ। গতরাত একটার দিকে সে হাসপাতালে বেলার কেবিনে এসেছে। হাসপাতালের গেইট দশটার দিকে বন্ধ হয়ে যায় বিধায় সে ফারাজের সাথে দারোয়ানের কথা বলিয়ে ভেতরে ঢুকেছে। রাতে বোনের কাছেই ছিল সে। সকালে মৌ রফিক চাচার কাছে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছিল৷ 


জিনিসপত্র গুছিয়ে বেলাকে রেডি করা হয়েছে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য৷ হাসপাতালের সবকাজ শেষ করা হয়েছে। চলে যাওয়ার আগে ফারাজ রুমে আসে। ওষুধপত্র সব ঠিক আছে কি না দেখে নেয়। 


ওয়াহাজ ওষুধগুলো হাতে নিতে নিতে বলে," আর কোনো সমস্যা হবে না তো?"


ফারাজ বেলার হাতটা আরেকবার দেখে বলে," কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। হাতে যতটুকু লেগেছিল তার কার্যকারিতা কমে গেছে। এখন ওটা একটু সাবধানে রাখলেই হবে। দেখা যাবে আগামীকালই একদম ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু দাগটা যাবে না। দাগ উঠাতে চাইলে অনেক পরে চিকিৎসা নিতে হবে।" তানিয়া মাহি।

" না না দাগ উঠানো লাগবে না। এমনি ঠিক হয়ে গেলেই হবে।"

" ঠিক হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। এখন তো আমাদের ওখানেই যাবেন তাই তো?"

" হ্যাঁ। পরশু নতুন বাসায় আসব। আচ্ছা, এখানে আর দেরি না করি। সাবধানে থেকো। আমরা আসছি।"


ওয়াহাজ বেলাকে মৌ-এর কাছে রেখেই বাহিরে বেরিয়েছে। সারাবেলা মৌ বেলাকে দেখে রেখেছে। বেলা নিজহাতে কিছু খেতে পারছে না মৌ নিজেই বেলাকে খাইয়ে দিয়েছে। মৌয়ের মাও বেলার খুব যত্ন করছেন। 


বিকেল থেকে বেলাকে রেখে ওয়াহাজ বাহিরে গেছে। রাতের খাবারের সময় হয়ে যাওয়ায়ও সে এসে পৌঁছায়নি।

রাতের খাবারের সময় হয়ে গেলে মৌ খাবারের প্লেট রুমে নিয়ে চলে আসে। বেলা শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিল। মৌ এসে ডেকে তুলে বসিয়ে দেয়। 


" অনেক রাত হয়ে গেছে। জলদি খেয়ে নাও।"

" আমাকে চামচ দিতে আপু। বাম হাতে চামচ দিয়ে খেতাম।"

" কেন?  আমি খাইয়ে দিচ্ছি মজা লাগছে না?"

" না, সেটা না। তুমি সেই বিকেল থেকে কষ্ট করছ আমার জন্য।

" কোনো কষ্টই না। আর কতদিনই বা তোমাকে এভাবে ভালোবাসতে পারব বলো তো? আমার বিয়ের পরেই তো তুমি চলে যাচ্ছ আমাদের সবাইকে ছেড়ে।"


মৌ বেলাকে খাইয়ে দিতে থাকে। খাওয়ানো যখন শেষের দিকে তখন বেলাকে নিম্নস্বরে বলে ওঠে," ফারাজ ভাইয়া কাউকে পছন্দ করে। সে নাকি ডিভোর্সি। ভাইয়া কি তোমাকে পছন্দ করে? তোমাকে বলেছে কিছু?"

মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-১০+১১


পড়ছেন সত্য প্রেমের কাহিনী

পর্ব ১৯ এবং ২০


মৌ বেলাকে খাইয়ে দিতে থাকে। খাওয়ানো যখন শেষের দিকে তখন বেলাকে নিম্নস্বরে বলে ওঠে," ফারাজ ভাইয়া কাউকে পছন্দ করে। সে নাকি ডিভোর্সি। ভাইয়া কি তোমাকে পছন্দ করে? তোমাকে বলেছে কিছু?"


মৌয়ের কথায় যেন খাবার গলায় আটকে যায়। মৌ সাথে সাথে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। বেলা তাড়াতাড়ি করে পানিটা খেয়ে নেয়। গ্লাসটা রেখে ক্ষীণগলায় বলে," না, উনি আমায় কিছু বলেননি। আমাকে কেন পছন্দ করবেন? নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে।"

" আম্মা সন্দেহ করেছে ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে৷ এ বিষয়ে আম্মা কথা বলতে পারছিল না তাই বলল তোমার থেকে শুনতে। "

" না, এরকম কিছুই না।"

" ভাইয়া কিছুদিন ধরে নিয়মিত থেকে অনিয়মিত হয়ে গেছে। সিগারেট বেশি খাচ্ছে, বাড়িতে থাকছেই না বলতে গেলে। আম্মার সাথে ওর গলায় গলায় ভাব অথচ তার সাথেও কথা বলছে না। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছে না। সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে আমি সেদিন ওর রুমে গিয়েছিলাম, দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে আর চোখের পানি মুছছে। ভাইয়া খুবই ইন্ট্রোভার্ট, কাউকে কিচ্ছু বলে না।"


বেলা চুপ হয়ে যায়। একটা মানুষ তাকে ভালোবেসে এতো কষ্ট পাচ্ছে অথচ সে কিছুই করতে পারবে না। যে মানুষগুলো তাকে পছন্দ করছে তারা যখন জানবে ফারাজের পছন্দ করা মেয়েটা সে নিজেই তাহলে সম্পর্কগুলো খেই হারাবে। 


বেলাকে চুপ থাকতে দেখে মৌ আবার বলে ওঠে," তোমাকে যেহেতু বলেনি তাহলে হয়তো তুমি নও। বাহিরের কেউ হয়তো। তুমি হলে তো আমাকে অন্তত তোমার কথা বলতো। "


বেলা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানায়। মৌ বলে," তুমিই বলো এটা কি আসলেই মেনে নেওয়া যায় যে, ভাইয়া এতো ভালো একটা অবস্থানে আছে আর সে কি না একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে!"


বেলা স্বাভাবিক গলায় বলে ওঠে," বাদ দাও তো ওসব। তোমার ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে। এখন ওসব চিন্তা না করে বিয়েতে মন দাও। "


দরজার বাহিরে থেকে ফাহমিদা বেগম জানান ওয়াহাজ চলে এসেছে। উনি ওয়াহাজের জন্য খাবার আলাদা করে বেড়ে রেখেছিলেন। বাসায় ফিরে যাওয়ার সময় ফাহমিদা বেগম সেটা ওয়াহাজের সাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন," এখানে তোমার জন্য খাবার আছে। ওয়াজিহা মা, খেয়েছে। এগুলো তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিও। এই কয়েকদিন তোমাদের আর রান্না করে খেতে হবে না, আমি খাবার পাঠিয়ে দেব।"


ওয়াহাজ মৃদু হেসে বলে," না আন্টি, আপনাকে এতো কষ্ট করতে হবে না। ওয়াজিহার হাতে সমস্যা তো কী হয়েছে, আমি তো আছি। আমরা দুই ভাইবোন ঠিক কোনো ব্যবস্থা করে নেব।"

" এখানে কী সমস্যা, বাবা?"

" এখন আত্মীয়রা আসতে শুরু করবে। আমি চাই না এটা নিয়ে কোনো কথা হোক। আর আমরা কাল পরশু নতুন বাসায় শিফট হবো। আপনি এসব নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়েকে রান্না করে খাওয়ানোর সামর্থ আমার আছে। আসছি।"


মৌ নিজের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ওয়াহাজের শেষ কথায় হাসতে থাকে। মাকে বলে," আম্মা, বিয়ের পর আমার আর রান্না করে খেতে হবে না।"

____


ওয়াহাজ আজ বেলাকে রুমের দরজা খুলেই ঘুমোতে বলেছে। কখন কী বিপদ হয় বলাতো যায় না। বেলা নিজের রুমে শুয়ে ছিল। ওয়াহাজ খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেলার রুমে আসে। টেবিলের ওপর ফোন বাজতে দেখে বলে," ফোন বাজছে টের পাওনি?"


বেলা ওয়াহাজের দিকে তাকিয়ে বলে," কে কল দিয়েছে?"


ওয়াহাজ টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ধ্রুবর নম্বর  সেখানে জ্বলজ্বল করছে। ওয়াহাজ চোয়াল শক্ত করে বলে," ধ্রুব কেন কল করছে? তুমি সিম চেঞ্জ করোনি?"

বেলা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে," না। ও বাড়ির কেউ কেউ কয়েকদিন পরপরই কল দেয়। "

" তুমি রিসিভ করো?"

" একদিন করে করেছিলাম। আর করিনি।"

" আমি আজই তোমার সিম চেঞ্জ করে দেব।"


কলটা এবার ওয়াহাজ রিসিভ করে। নম্বর ধ্রুবর হলেও ওপাশ থেকে মহিলার গলা ভেসে আছে।


মেঘ বিয়োগের মৌসুম || তানিয়া মাহি (নীরু) - পর্ব-০৫

ওয়াহাজ চোয়াল শক্ত করে বলে," হ্যালো, কে বলছেন?"

ওপাশ থেকে ধ্রুবর স্ত্রী বলে ওঠে," এটা কার নম্বর, বেলার না?"

" হ্যাঁ, কেন?"

" আপনি কে? ওর ভাই? আপনার বোনকে বলে দিয়েন আমার স্বামীর সাথে যেন কোনো প্রকার কথা না বলে।"

" কাকে দেখেছেন থুথু ফেলে আবার তুলে নেয়? নিজে নিজের বরকে সাবধানে রাখুন। আমার বোনকে ঠকিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছে, আপনাকে ছেড়ে অন্যকাউকে বিয়ে করতে বেশি সময় নেবে না। আমার কথা মাথায় রাখবেন আশা করি। আল্লাহ হাফেজ। "


ওয়াহাজ লিলিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সাথে কল কেটে ফোন থেকে সিমটা খুলে ফেলল। বেলাকে বলল," তোমার বাহিরে যাওয়ার ব্যবস্থা প্রায় শেষ।  অনেকটা দিন লেগে গেল এসবে। যদিও ভেবেছিলাম সবকাজ খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে কিন্তু সেটা হলো না। যাই হোক সামনে মাসের প্রথম দিকেই তোমার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছি। যে কয়েকদিন এখানে আছ সেকয়েকদিনের জন্য আমার একটা সিম নিয়ে ইউজ করতে পারো। "


বেলা সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো। দুদিনের আগ্রহ আর দমিয়ে রাখতে পারল না সে। ভেবেছিল ওসব বিষয়ে আর কোনো কথা বলবে না কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর সম্ভব হলো না। কঠিন প্রতিজ্ঞা তাকে ভাঙতেই হলো৷ 


ভাইকে নির্জীব গলায় জিজ্ঞেস করল," ভাইয়া, ওদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি? "

বেলার দিকে না তাকিয়েই ওয়াহাজ উলটো প্রশ্ন করল," কাদের?"

" যারা আমার মুখে এ*সিড মার*তে চেয়েছিল।"

" তুমি তো বললে তুমি ওদের নিয়ে ভাববে না। এখন কী হলো তোমার?"

" আগ্রহ দমিয়ে রাখতে পারছি না। প্লিজ বলবে?"


মিটিমিটি হাসে ওয়াহাজ। সে জানতো তার বোন কিছুতেই চুপচাপ থাকতে পারবে না। পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করল সে। অতঃপর ফোনটা বেলার হাতে দিয়ে বলল," দেখো তো শা*স্তিটা কম হয়ে যাচ্ছে কি না? "


বেলা উঠে বসলো। ফোনের স্ক্রিনে কিছু একটা দেখে আঁতকে উঠল সে। কাচুমাচু মুখে বলল," তুমি ওদের ধরতে পেরেছ! কীভাবে ধরলে?"

" তোমার ভাইয়ের কলিজায় হাত দিয়েছিল ওরা। সুখের হাওয়া কী করে লাগতে দেই ওদের গায়ে? পাপ হবে তো।"

" কিন্তু কীভাবে কী করলে তুমি? একা এতোকিছু!"

" একা কখন বললাম?"

" তাহলে?"

" ছিল কেউ আমার সাথে। তুমি এসব বিষয় জানতে চেও না।"

" কিন্তু ভাইয়া.…"

" ওরা দুজন এই ভিডিয়োতে সবকিছু স্বীকার করেছে। আগামীকাল ভিডিয়োটা পাবলিক হবে। দ্যান হাজতবাস।"


ওয়াহাজ বেলার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে তৎক্ষণাৎ রুম থেকে বেরিয়ে যায়। বেলার মাথায় কিচ্ছুটি ঢুকছে না। তাদের পেলোই বা কোথায় আর তার ভাইয়ের সাথে আছেই বা কে!

_____


দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গিয়েছে। বিয়ের ঠিক তিনদিন আগে ওয়াহাজ আর বেলা নতুন বাসায় চলে এসেছে। এখানে এসে নতুন করে বেলার কোনকিছুই আর করতে হয়নি৷ বেলার হাতের জন্য ওয়াহাজ নিজেই মৌয়ের বাবাকে জানিয়ে মৌকে নিয়ে এসে বাড়ি গুছিয়েছে দুজন মিলে। বেলা আর নিজে থেকে তাদের সাথে আসেনি কারণ ওদের দুজনের ব্যক্তিগত কিছু সময় কাটানোর প্রয়োজন ছিল। 


মৌয়ের বাবা-মা বলেছিল বিয়ে পর্যন্ত ও বাড়িতেই থাকতে কিন্তু ওয়াহাজ রাজি হয়নি। বেলাকে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি পেরেছে নতুন বাসায় চলে এসেছে সে। 


আজ বিয়ের আগের দিন। ওয়াহাজ মৌদের বাড়িতেই আছে। বিকেলে তাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেলাও গিয়েছিল কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর সে বুঝতে পারে তার অন্যদের মতো শাড়ি পরতে ইচ্ছে করছে। ভাইয়ের থেকে বাসার চাবিটা নিয়ে একাই আসতে চেয়েছিল কিন্তু ওয়াহাজ তাকে একা আসতে দেয়নি। সে নিজেই অনুষ্ঠান ছেড়ে বোনকে রেখে গিয়েছে। একেবারে সাথে করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু বেলা জানায় শাড়ি পরে সাজতে অনেক দেরি হবে। নতুন বরের এখানে থাকা উচিৎ না। ও বাড়ির সবাই মন খারাপ করবে। সবদিক ভেবে দেখে ওয়াহাজ বলে গিয়েছে সে কাউকে পাঠিয়ে দেবে বা নিজেই আসবে। নিষেধ করেছে বেলা যেন একা একা বাড়ি থেকে না বের হয়৷ বেলাকে নিয়ে ওয়াহাজের এত কিসের চিন্তা কিছুতেই বুঝে আসে না বেলার।

চন্দ্রাবতী ( পর্ব ০৮ )


বেলার পাঁচ বছর যেহেতু সংসার করেছে সে হিসেবে শাড়ি পরতে পারাটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। মেয়েরা বিয়ের পর অনেককিছুই শিখে যায়। বিয়ের আগে যে মেয়েরা নিজেরাই শাড়ি পরতে পারে তারা এক কথা গুণবতী। বেলাও বিয়ের আগে থেকেই শাড়ি পরতে জানতো। কেউ তাকে শেখায়নি, একা একাই পারতো। 


বেলা রেডি হয়ে ভাইকে কল দিল। ওয়াহাজ জানালো এখন সে আসতে পারবে না তাই ফারাজকে পাঠিয়ে দেবে। ফারাজ আসবে শুনে বুকের ভেতরটা কেমন একটা করতে থাকে। যে মানুষটার কাছে থেকে সে দূরে থাকতে চায় সেই মানুষটাই কেন ঘটনাপ্রবাহে তার সন্নিকটে চলে আসে বারবার! তার ভাই-ই বা কীভাবে পারল ফারাজকে পাঠানোর কথা ভাবতে? তানিয়া মাহি. সে কী জানে না মানুষের কাছে থেকে অনুভূতি লুকিয়ে রাখা কঠিন কাজ! বেলা মনে মনে বিলাপ করতে থাকে ভাই ঠিক করেনি, একদম ঠিক করেনি। 


বেলা রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছিল। কলিংবেল বাজতেই দুরুদুরু বুকে উঠে দাঁড়ায় সে। বসে থাকায় কুচি কিছুটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে বলে হালকা নিচু হয়ে কুচিগুলো ঠিক করে নেই। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। 


দরজা খুলেই দেখে ফারাজ বাহিরে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে। মাথার দিকে তাকিয়ে বেলা বুঝতে পারল বাহিরে হয়তো বৃষ্টি নেমেছে। 


ফারাজকে ভেতরে আসতে বলে বেলা নিজে ভেতরের দিকে যেতে লাগলে ফারাজ পিছন থেকে বলে," দেরি করব না বেশি। ওখানে সবাই অপেক্ষা করছে। আপনি শুধু আমাকে এক গ্লাস পানি খাওয়াবেন।"

" ঠিক আছে। আপনি বসুন, আমি পানি দিচ্ছি।"


ফারাজের জন্য বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে এ কথাটা ডাহা মিথ্যা কথা। তার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে না। সবাই নিজের মতো আনন্দ করছে। ফারাজের মতো অন্তর্মুখী মানুষগুলো যেমন সবার সাথে মিশতে পারে না সেরকম তাদের জন্য কেউ কোনোকিছু ভিন্ন অর্থ না থাকলে আটকেও রাখে না। 

সে মূলত বেলার সাথে একা সময় কাটাতে ভয় পাচ্ছে। তার অনুভূতিগুলো যে মাঝেমাঝে মরাকান্না শুরু করে। এতো করে চাওয়া মানুষটা তার হবে না ভাবলে দম আটকে আসে তার। বেলাকে সামনে পেলেই অনুভূতিগুলো ছুটোছুটি শুরে করে, বেরিয়ে আসতে চায়।


বেলা পানি নিয়ে এসে ফারাজের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে," নিন। পানিটুকু খেয়ে নিন।"


বেলার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসে ফারাজ। বেলার হাত থেকে গ্লাসটা নিতে নিতে বলে," হাত কেমন এখন?"

" ঠিক হয়ে গেছে তো।"


ফারাজ গ্লাসটা রেখে বলে, " চলুন তবে। বাসায় গিয়ে খেতে হবে, ক্ষুধা পেয়েছে।"

" বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে? দেরি করে যেতে পারেন। "

" কই না তো! বৃষ্টি কোথায় দেখলেন আপনি?"

" আপনার চুল ভেজা যে।"

" আমার শরীর তো ভিজেনি। আমি হাসপাতাল থেকে এসে গোসল দিয়েছি তখনই আপনার ভাই বলল আপনাকে নিয়ে যেতে। চলুন।"

" আমি বাসায় এসে নুডলস রান্না করেছিলাম। খেতে পারেন কিন্তু। খুব একটা খারাপ হয়নি।"


প্রথমবারের মতো বেলাকে আপাদমস্তক একবার দেখে নেয় সে। সবুজ হলুদের সংমিশ্রণে একটা শাড়ি পরেছে সে। হালকা সাজে তাকে অপ্সরা লাগছে। মনে মনে প্রশ্ন জাগে অপ্সরা দেখতে কেমন!


চোখ নামিয়ে নেয় ফারাজ। মৃদু হেসে বলে," বাসায় গিয়েই খাব চলুন।"

" আপনাকে খাওয়ার ব্যাপারে জোর করা কি সমীচীন দেখাবে? দেখালে জোর করতাম।"

" সমীচীন দেখালেও আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। বাঙালী বলে কথা। সারাদিন পর একটু ভাত খেতে পারলে ভালো লাগবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে চলুন।"


ফারাজ বেলাকে রুমের দিকে যেতে দেখে আনমনে বলে ওঠে," আপনি চাইলেই আমাকে সারাজীবন রান্না করে খাওয়াতে পারতেন।"


বেলা থেমে যায়। পিছন ফিরে বলে," সারাজীবন আমার রান্না করতে ভালো লাগবে না জন্যই তো পালাচ্ছি।"

" যেখানে যাচ্ছেন সেখানে বাংলাদেশের মতো কাজের বুয়া পাবেন না। হাত পু*ড়িয়ে রান্না করেই খেতে হবে।"

" হুম।"

" আপনি দেশ ছাড়লে একটা হৃদয় সারাক্ষণ পুড়*তে থাকবে। "

" এমন কোনো সম্পর্কে আমি অবগত নই।"

" আর কীভাবে জানালে, জানবেন?"

" আমি আসলে জানতেই চাই না।"

" একবার সুযোগ দিয়ে দেখলে পারতেন না?"

হৃদয়ের নিকুঞ্জ নীড়ে- পর্ব ১৩

" শেষে ফলাফল আগের মতো হলে পুরো জীবনটাই নাট্যমঞ্চে মনে হবে। আমার মনে হয় সম্পর্ক তৈরিই হয় কোনো একসময় শেষ হতে। যেটার শুরু আছে সেটার শেষও আছে।"

" আপনি একবার রেখেই দেখুন না। জীবন শেষ হলে তবেই সম্পর্ক শেষ হবে তার আগে নয়। আপনাকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণা আমাকে পুড়ি*য়ে মারছে।"


বেলার বলার স্পৃহা জাগে- আমিও কারো সাথে আজীবন ভালো থাকতে চাই। আমিও চাই আপনিই সেই মানুষটা হন যদি আমাকে ভালোবেসে থাকেন। আপনার উপস্থিতি আমার বুকে বারবার ঝড় তুলছে।  দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বাস করে ঘর বাধতে মন চাইছে। 


বেলা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে," যেটা হওয়ার নয় সেটা নিয়ে কথা বলবেন না প্লিজ। বারবার আপনাকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে না আমার।"


উঠে দাঁড়ায় ফারাজ। বেলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে," একবার জড়িয়ে ধরবেন আমায়? অন্তত মরুর বুকে একটু জল পরতো।"

" অন্যা*য় আবদার করবেন না ফারাজ। আপনি বাহিরে গিয়ে দাঁড়ান, আমি আসছি।"

" আপনি এতো কঠোর কেন? একটু নরম হতে পারেন না৷ একজন আপনাকে পেতে মরিয়া হয়ে আছে সেটা বুঝতে পারছেন না? বারবার ভালোবাসা ভিক্ষে চাইতে আমারও ইচ্ছে করে না। বেহায়া হয়ে যাচ্ছি আমি।"

" ভালোবাসায় সম্মান হারানো উচিৎ না। নিজেকে সম্মান করুন।"

" ফিরিয়ে দিচ্ছেন?"

" একদম। শেষবারের মতো। আশা করছি এসব নিয়ে আর ভাববেন না। বাড়িতে এসব নিয়ে কিছু বলবেন না। ভাবি আমাকে আপনার ব্যাপারে সন্দেহ করেছে। আমি আগপিছ কোনো সম্পর্কে জড়াবো না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, আর নড়চড় হবে না।" 


ফারাজ নিজেকে গুটিয়ে নেয়। বেলার চোখে চোখ রেখে বলে," অলরাইট। শেষ একটা আবদার রাখবেন?"

" শুনি?"

" দেশে ফিরবেন কবে?"

" জানা নেই। হয়তো না-ও ফিরতে পারি। "

" ফিরবেন আপনি। "

" কেন?"

" আমার জন্য।"

" এটা কোনো সিনেমা না ফারাজ।"

" আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব। আপনি যেমন একজনের কাছে ঠকে পুরুষজাতিকে নিষিদ্ধ করেছেন ঠিক তেমন আমি আপনাকে কথা দিলাম আপনি ছাড়া সব নারী আমার জন্য নিষিদ্ধ। "

" এটা কোনো ছেলেখেলা নয় ফারাজ।"

" আপনি সম্পর্কে আমার বেয়াইন হলেও আমি আপনার সাথে মজা করছি না।"

" ফারাজ......"

" ২১ জুন দিনটা আমি আপনার সাথে কাটাতে চাই। না পেলাম আপনাকে, আপনার কাছে এই দিনটা চাই।"

" ২১ জুন! এটা অনেক দেরি আর তাছাড়া আমি সামনে মাসেই চলে যাচ্ছি।"


বুকে চিনচিন ব্যাথা করে ওঠে ফারাজের। প্রিয় মানুষের অনুপস্থিতির দিনগুলো এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবে!


দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সে। বলে ওঠে," আপনি ২১ জুন আমার জন্য রেখে দিবেন। বেঁচে থাকলে পুরোটা দিন আমি আপনার সাথে কাটাবো। সেটা যে বছরেই হোক না কেন।"

" ২১ জুন কেন?"

" ২১ জুন পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম একটা দিন। শুধুমাত্র এই দীর্ঘতম দিনটা আপনি আমাকে দিবেন। পৃথিবীর দীর্ঘতম দিনটা আমি আপনার সাথে কাটাতে চাই, ওয়াজিহা।"

" বাচ্চামি ছাড়েন।"

" চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে। আপনার ভাইয়ের আবার চিন্তা হবে।"


#চলবে....



প্রিয় পাঠক, সর্বশেষে একটা কথাই বলতে চাই, আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্য নিয়েই আমাদের এই আয়োজন। আপনার একটি শেয়ার আমাদেরকে গল্প পোস্ট করার স্পৃহা দ্বিগুন করে তোলে। তাই অনুরোধ রইলো একটি শেয়ার করবেন এবং “মেঘ বিয়োগের মৌসুম (পর্ব ১২-২০) - রোমান্স প্রেমের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা  নিচের কমেন্ট বক্সে একটি কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। পরের গল্পটি পড়ার জন্য আমন্ত্রন রইলো। ধন্যবাদ।{alertInfo}



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

দয়া করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।