চন্দ্রাবতী ( পর্ব ১৬ ) |
চন্দ্রাবতী ( পর্ব ১৬ )মিশিতা চৌধুরী
এখন পড়ুন "রোমান্টিক প্রেমের গল্প"
মিসেস সাবিনা চলে যাওয়ার পর চন্দ্রা নীলের পাশে গিয়ে বসলো। চন্দ্রাকে দেখে নীল মুখ ঘুরিয়ে নিল। চন্দ্রা বলল,"নীল স্যার"
নীল অভিমানী গলায় বলল,"চন্দ্রা ম্যাডাম আমি কথা বলবো না আপনার সাথে। আপনি দয়া করে চলে যান।"
"নীল স্যার আমায় আপনি মাফ না করলে আমি কোথাও যাবো না।আমার জন্য আজকে আপনার এই অবস্থা।"
"যদি কখনোই মাফ না করি তাহলে কি করবেন? আমার পাশে সারাজীবন থেকে যাবেন!"
কথাটা শুনে চন্দ্রা চুপসে গেল।বলল--
"নীল স্যার আপনার আম্মু যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন তার ছবি দেখেন নি কেন?"
"আমি যাকে ভালোবাসি সে ছাড়া অন্য কাউকে দেখার ইচ্ছে নেই।"
"নীল স্যার আপনি কি জানেন কার সাথে আপনার আম্মু বিয়ে ঠিক করেছেন?
"জানার প্রয়োজন বোধ করি নি।"
"নীল স্যার আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছিল আমার সাথে।"
নীল শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,"কিহহহহহ!!"
"আস্তে পায়ে ব্যাথা লাগবে।শুয়ে পড়ুন। আমি সব বলছি।"
নীল শুয়ে পড়লো।নার্স এসে বলল,"ম্যাম পেশেন্টকে ওষুধ খাওয়াতে হবে।তার আগে এই খাবারটা খাওয়াতে হবে।"
চন্দ্রা বলল,"যদি কিছু মনে না করেন আমি কি খাইয়ে দিতে পারি।"
"জি পারেন। খাবার খাওয়ার পর এই ওষুধগুলো খাওয়াবেন।"
"জি আচ্ছা।"
চন্দ্রা নীলকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল,"অনুর বিয়ের পর আমরা সবাই বাসায় চলে আসি। আসার আগে আন্টি আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু এখানে দরকারি একটা কাজ থাকায় আর কথা বলা হয়ে ওঠে নি।উনি আমায় পরের দিন একটা রেস্টুরেন্টে যেতে বললেন।আমি ওনার কথামতো ওই রেস্টুরেন্টে পৌঁছালাম। একটু পরে আন্টি আসলেন। বললেন," চন্দ্রা মা আমার ছেলেটা তোমায় পাগলের মত ভালোবাসে। তোমায় ছেড়ে থাকতে পারবে না।"
উনি আমায় অনুনয় বিনয় করেন।আমি কিছুক্ষণ ভেবে ওনাকে আমার সিদ্ধান্ত জানালাম। "
"তার মানে সেদিন বিকেলে মম তোমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো?"
"হুম। অনেকক্ষণ কথা বলার পর উনি বললেন আপনাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চায়। সত্যি বলতে ওনার সারপ্রাইজটা শুনে অবাক হয়েছি। কিন্তু ভয় ও পেয়েছি।উনি বললেন আপনাকে যেন আগে থেকে কিছু না জানানো হয়।সবটা বিয়ের দিন জানাবেন।"
নীল অবাক হয়ে বলল,"মম এটা বলেছে!!"
"হুম তারপর আমি আপনাকে এড়িয়ে চলতে লাগলাম কারণ আপনার সাথে বেশি কথা বললে যদি মুখ ফসকে কিছু বেরিয়ে আসে তাহলে আন্টির সারপ্রাইজটা নষ্ট হয়ে যাবে।"
"যেদিন তোমায় নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়েছিলাম ওই দিন মম তোমার বাড়িতে গিয়েছিল?"
"জি।বিয়ের পাকা কথা বলতে।"
নীল মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো।"এই মহারানী আমি নিজের দোষেই তবে এতবড় ক্ষতি করলাম।"
"আপনি যে এমন একটা কান্ড বাঁধিয়ে ফেলবেন তা কে জানতো।"
"চলো মমকে বলি বিয়ের ব্যবস্থা করতে আমি রাজি।"
মিসেস সাবিনা এসে বলল,"দুই মাস তোকে বেড রেস্টে থাকতে হবে আব্বা।কোনো নড়াচড়া নয়।"
নীল মাথায় হাত দিয়ে বলল,"মম এত্তদিন থাকতে হবে। তাহলে তো বিয়েতে দেরি হয়ে যাবে!"
"কি আর করা আব্বা আমি চাইলাম এক সপ্তাহের মধ্যে চন্দ্রা মাকে ঘরে নিয়ে আসতে।তুই তো হতে দিলি না।আমি এখন বাসায় যাচ্ছি। চন্দ্রা মা পাগলটাকে দেখে রাখিস।
এটা বলেই মিসেস সাবিনা চলে গেলেন
নীল বলল,"আমি সত্যি এতবড় একটা গাধা কবে হলাম।সব না জেনে বোকামি করে ফেললাম।"
চন্দ্রা অভিমানী স্বরে বলল,"কেন সমস্যা কি নীল স্যার আপনার বৃষ্টি ম্যাডাম আছে না!"
নীলাশা নীলের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছে।নীল ও হেসে উঠলো। চন্দ্রা বলল,"কি ব্যাপার নীলাশা আপু তুমি এমন রহস্যজনক হাসি দিচ্ছো কেন?"
নীল বলল,"ও কিছু না।"
হঠাৎ বৃষ্টি এসে বলল,"নীল তুই ঠিক আছিস তো?"
"হ্যাঁ বৃষ্টি আপু খুব ভালো আছি।"
"তোর দুলাভাই আসার জন্য টিকেট কেটেছে।আমি বলেছি বিয়েটা হতে দেরি আছে।আরো কিছু দিন পরে আসতে।"
চন্দ্রা বলল,"এক মিনিট। আপনারা অফিসে তুমি বলতেন।আর নীল স্যার আপনি তো বললেন ওনার বিয়ে হয় নি। কিন্তু দুলাভাই টিকেট এসব কোথা থেকে আসল?"
চন্দ্রার প্রশ্নে নীল , বৃষ্টি আর নীলাশা হাসতে লাগলো।নীলাশা বলল,"ওটা তো নাটক।যাতে তুমি বৃষ্টিকে দেখে জেলাস ফিল করে নীলকে মনের কথাটা বলে দাও। কিন্তু চন্দ্রা, মানতেই হবে তোমার প্রচুর ধৈর্য্য।এতো কিছু দেখার পর ও তোমার মধ্যে একটু ও পরিবর্তন আসলো না। আসলে বৃষ্টি আমার মামাতো বোন।ওর বিয়ে হয়ে গেছে।নীল আমি আর অনু মিলে এই প্ল্যানটা করেছিলাম।"
চন্দ্রা হতবাক হয়ে বলল,"আমারও একটু আধটু খটকা লেগেছে। কিন্তু ছেলেদের মন তো তাই আর গুরুত্ব দেই নি।"
নীল বলল,"সরি মহারানী।আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছ। এটা ছাড়া আর অন্য কিছু মাথায় আসছিল না।"
বৃষ্টি এসে বলল,"নাও চন্দ্রা তোমার রাজা মশাইয়ের দায়িত্ব তুমি নাও।এ কটা দিন যা জ্বালিয়েছে আমায়। প্রতিটা মূহুর্তে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আড়ষ্ট থাকতাম।"
নার্স এসে বলল,"আপনাদের এবার বাইরে যেতে হবে। ওনার ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে।"
সবাই বাইরে চলে যাচ্ছিলো।নীল বলল,"চন্দ্রাবতী আমায় ঘুম পাড়িয়ে দাও।"
চন্দ্রা নীলের মাথা হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।এক সপ্তাহ পর নীলকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো এক প্রকার বাধ্য হয়ে।সে কিছুতেই হাসপাতালে থাকতে চাইছিলো না।
"আব্বা ডাক্তার কিন্তু বার বার বলে দিয়েছে পায়ে যেন চোট না লাগে। ভালোভাবে সুস্থ না হওয়া অবধি ছোটাছুটি বন্ধ।"
"ঠিক আছে মম।"
সবাই মিলে নীলের খুব খেয়াল রাখছে। চন্দ্রা সকাল বিকাল এসে নীলের সাথে দেখা করে যায়। আকরাম সাহেব,বৃষ্টি আর চন্দ্রা মিলে অফিসের কাজগুলো সামলায়।প্রায় এক মাস পর ডাক্তার নীলকে একটু একটু করে হাঁটতে বলেছেন। এতো দিন হাঁটাহাঁটি না করার জন্য নীলের হাঁটতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। বিকেলে চন্দ্রা এসে দেখে নীল বাগানে বসে কি যেন ভাবছে। চন্দ্রা ধীরে ধীরে নীলের পাশে এসে বসল। কিন্তু নীল টের পেলো না। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর নীল বলল,"মহারানী তুমি কি ভেবেছিলে তোমার উপস্থিতি আমি বুঝতে পারি নি?"
চন্দ্রা অবাক হয়ে বলল,"নীল স্যার আপনি আমার অপ্রকাশিত মনে মনে বলা কথা গুলো কিভাবে বুঝতে পারেন?"
"আমি যে তোমায় বড্ড ভালোবাসি।"
"নীল স্যার!!"
"হ্যাঁ মহারানী। তুমি আমার আশেপাশে থাকলে খুব ভালো থাকি। নিজের কাছে নিজেকে খুব খুশি খুশি লাগে। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়।জানো মহারানী আমি খুব স্বার্থপর।আমি নিজের ভালো থাকার জন্য তোমাকে চাই।"
"নীল স্যার আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।"
"তোমার ব্যাপারটা কি বলো তো?সে তখন থেকে নীল স্যার নীল স্যার করে যাচ্ছো।বলি আমি কি এখনও তোমার স্যার হয়ে থাকবো? তোমার মুখে শুনে শুনে আমার বাবুরাও আমায় নীল স্যার বলে ডাকবে।"
চন্দ্রা ফিক করে হেসে উঠলো।"আপনি না সবসময় এমন মজা করেন এখনো বিয়ে হয়নি আর আপনি বাবু....!"
নীল চন্দ্রা হাত দুটোকে ঠোঁটের কাছে নিয়ে আলতো ভাবে ছুঁইয়ে দিলো।তারপর নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে বলল,"চন্দ্রাবতী তুমি আমার মহারানী হয়ে থেকো সারাজীবন।এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি হয়ে তোমার শীতল পরশে জড়িয়ে রেখো। মহারানী আমার এই অগোছালো আমি টাকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে কি তোমার আপত্তি আছে?
চন্দ্রা নীরব হয়ে গেল।
"কি হলো মহারানী তুমি এমন চুপ হয়ে গেলে কেন?"
"নীল স্যার আমি আপনাকে....."
নীলাশা এসে বলল......
(চলবে)